ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লালমনিরহাট হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসে অডিট

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

লালমনিরহাট হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসে অডিট

চার বছর পর নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ ২৮ অক্টোবর ॥ বার বছর পর লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ও সদর হাসপাতালে অফিসিয়াল অডিট হচ্ছে। অডিট করতে আসা টিমের কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মুখে মুখে প্রচার হচ্ছে এক যুগের দুর্নীতির ফিরিস্তি। লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, র্দীঘ ১২ বছর ধরে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিস ও একশত শষ্যার সদর হাসপাতালে কোন অডিট হয়নি। তাই এই দীর্ঘ সময়ে অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ঘটলেও শুধু অডিটের অভাবে সকলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেত। সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। এক যুগের পুরনো হিসাবের অডিট করতে মাত্র ৫ দিন অডিট টিম কাজ করে। কর্মচারীরা প্রশান তুলেছে এই ৫ দিন অডিট টিমের লোকজন হোটেলে ও অফিসে খোশ গল্প করে কাটিয়েছে। তাই অডিট নিয়ে ও অডিট টিম নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর হতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনে অডিট হয়। এই অডিটের খবরে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এমনকি যারা অবসরে গেছেন তাদের কেও শহরের একটি আবাসিক হোটেলে অডিট টিমের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে। তাই অডিট নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মুখে মুখে নানা অনিয়ম দুর্নীতির খবর ঘুরপাক খাচ্ছে। এক যুগ ধরে লালমনিরহাটের একশত শষ্যার সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসে পথ্য, খাদ্য সরবরাহ, ওষুধ, গজ, ব্যান্ডেজ, মনিহারি দ্রব্য সরবরাহ, সংস্কার বিল, বিজ্ঞাপন বিল, নির্মাণাধীন নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউসহ সকল প্রকার বিল ভাউচারের অনেকটাই সরকারী ক্রয় নীতির আলোকে হয়নি বলে প্রশ্ন উঠেছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিউনিটি সেন্টারে মাঠ পর্যায়ে লোকবল (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মী) নিয়োগ হয়। এতে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এই নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় সাবেক সিভিল সার্জনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করে বদলি করা হয় বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। হিসাবরক্ষককেও শাস্তিমূলক অন্যত্র বদলি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। লালমনিরহাটে হাসপাতাল ও সিএস অফিসের দুর্নীতির বিষয়টি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা সকলের কাছে ওপেন সিক্রেট। জেলায় স্বাস্থ্যসেবার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে। নতুন কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দিলেও বেশি দিন থাকতে পারে না। তাকে অন্যত্র বদলি করে দেয়া হয়। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকগণ প্রায় সকলেই কোন না কোনভাবেই ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত। নতুন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এলে তাদের ক্লিনিকের ব্যবসায় ভাটা পড়তে পারে। অভিযোগ আছে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকা আউটডোর, ইনডোর ও জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তির স্লিপের টাকা সরকারী কোষাগারে জমার নিয়ম। কিন্তু সিøপের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি একশত শষ্যার। ২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ শষ্যার লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটিকে আড়াইশত শষ্যা করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালটিতে এখনও ৫০ শষ্যার প্যাটানের জনবল নেই। বিনা টেন্ডারে ৫ মাস ধরে হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহ চলছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্তাকে ম্যানেজ করে হাসপাতালে নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবরক্ষক কাম অফিস সহকারী জানান, অডিটে এলে খাতির যতœ করতে হয়। এটা বহু বছরে রেওয়াজ। এভাবেই চলে আসছে। বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মোস্তফা কামাল জানান, তিনি ছুটিতে নিয়েছেন। এই সিভিল সার্জন অল্প কিছুদিন হয় লালমনিরহাটে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নানা প্রশংসিত উদ্যাগ নিয়ে সকলের নজর কেড়েছেন। সিভিল সার্জন মোবাইল ফোনে জানান, হাসপাতাল সুষ্ঠু পরিচালনা করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ১২ বছর অডিট হয়নি। তাই কাজ-কর্ম নিয়ে সন্দেহ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অডিট হয়ে গেলে কাজে কর্মে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসবে বলে তিনি জানান।
×