ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাতিরঝিল

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

হাতিরঝিল

মানব দেহের ফুসফুস যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে মানুষকে সজিব রাখে তেমনি রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটি হয়ে উঠে ঢাকার ফুসফুসের মতো। কিন্তু শহরের সেই ফুসফুসে আজ ময়লা আবর্জনা জমেছে। ফুসফুসে যদি ময়লা জমে সেটা কখনও নির্মল বায়ু সরবরাহ করতে পারে না। এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমতে থাকে। প্রকল্পটির বয়স দুই বছর যেতে না যেতে হাতিরঝিলের যখন বিবর্ণ দশা তখন হাতিরঝিলকে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনতে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী নিজেই ঝাড়ু ও বেলচা হাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তাঁর এই উদ্যোগটি মহৎÑ অনুকরণীয় একটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু মন্ত্রীর এই প্রয়াস সার্থক হবে কতটুকু সেটাই দেখার বিষয়। হাতিরঝিলে দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে আনতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রকল্পটি বনানী ও গুলশান লেকের সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। থাকবে পানি পরিশোধন ব্যবস্থা। ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে হাতিরঝিল দিয়েছিল কিছুটা স্বস্তি। এখানে জলাশয়ের পানি ছিল স্বচ্ছ। তেজগাঁও, বাংলামোটর, ইস্কাটন, মগবাজার থেকে গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা যাতায়াতের জন্য হাতিরঝিল সহজতর রাস্তা হিসেবে যাতায়াতকারীদের জন্য ছিল আশীর্র্বাদ। দৃষ্টিনন্দনভাবে রাস্তাগুলো সাজানো হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্রিজগুলো প্যারিস শহরের কথা মনে করিয়ে দিত এবং রাস্তার ওপর সাদা ফোয়ারার মতো স্থাপনাগুলোর ওপর রাতের লাল-নীল বাতির সমাহারে খুঁজে পাওয়া যেত সিডনি শহরের সাদৃশ্য। ঢাকার কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে এসে হাতিরঝিলে ছিল অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি প্রিয় প্রাঙ্গণ। কিন্তু দুঃখ ও বেদনার বিষয়, সেই হাতিরঝিলের করুণ দশা চোখে পড়ে। বাস্তবতার বিচারে বলা যায়, হাতিরঝিল সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। স্বচ্ছ পানি হয়ে পড়েছে কালো, আবর্জনাযুক্ত। কাছে যাওয়া যায় না বাতাসে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। বিভিন্ন স্থানে যে বসার জায়গার ব্যবস্থা ছিল সেগুলো ধূলোবালিতে সর্বক্ষণ ভরে থাকে। গাছ লাগানোর যে পরিকল্পনা তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য যে ডাস্টবিন তার অধিকাংশ চুরি হয়ে গেছে। এখানে এখন ভাসমান পতিতারা অবাধে চলাফেরা করে। পথশিশু আর নেশাখোররা এখানে আড্ডা দেয়, ঘুমায়। ঝলমলে লাইটের অনেক সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হলেই যে হাতিরঝিলে মানুষ ছুটে যেত তা এখন হয়ে পড়েছে আতঙ্কের একটি স্থান। তাই মানুষ এখানে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এখানে দুর্ঘটনায় পড়ে পথচারীর মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে। পানির প্রবাহে শুধু মাছ রাখার ব্যবস্থা নয়, এখানে নৌপথ তৈরি করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের পরিকল্পনাও ছিল। হাতিলঝিলকে সজীব ফুসফুসে রূপান্তর করতেই ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারে মন্ত্রী নিজেই নেমেছেন। নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো মাথায় রেখে হাতিরঝিলকে আকর্ষণীয় করলে ঢাকার মানুষ ছুটে আসবে এখানে। পানির প্রবাহ যদি সব সময় ঠিক রাখা যায় তাহলে এখানে নৌকায় ভ্রমণ করতে পারবে মানুষ। গাছ লাগালেই হবে না, এর যতœ নিতে হবে। রাস্তার দু’ধারে লাগাতে হবে ফুলের গাছ। পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে হাতিরঝিলের পুরো চত্বর। হাতিরঝিল হয়ে উঠুক বিনোদনের একটি সুন্দর স্থান। ঢাকার ফুসফুস হাতিরঝিল হয়ে উঠুক সজীবÑ সেটাই রাজধানীবাসীর কামনা।
×