ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালী ব্যাংকের চেক চুরির ঘটনায় এক কর্মকর্তা সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

সোনালী ব্যাংকের চেক চুরির ঘটনায় এক কর্মকর্তা সাসপেন্ড

দুই তদন্ত কমিটি অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখা থেকে অর্ধশতাধিক চেক চুরির ঘটনায় এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার সঙ্গে কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী জড়িত নয় দাবি করে সোনালী ব্যাংক বলছে, এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা। তবে কমিটির রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে সোনালী ব্যাংক। এর আগে গত রবিবার দুপুরে ব্যাংকের ক্লিয়ারিং সেকশনের ড্রয়ার থেকে চেক চুরির ঘটনায় সোমবার সাধারণ ডায়েরি করেছে ব্যাংকটির লালমাটিয়া শাখা। সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার দুপুরে ব্যাংকের ক্লিয়ারিং সেকশনের ড্রয়ার থেকে চেক চুরির ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে লালমাটিয়া শাখার সিনিয়র অফিসার ফরিদা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া রমনা প্রিন্সিপাল অফিসের এজিএম মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া প্রিন্সিপাল অফিস এবং রমনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএমের নেতৃত্বে অন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের রমনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা যায়, ঘটনাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী ঘটায়নি। তিনি আরও বলেন, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণে দুর্ঘটনাটি সোনালী ব্যাংক বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে লালমাটিয় শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম খান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় ৫০টি পেমেন্ট অর্ডার/চেক চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি চেকের ইরফরমেশন আছে। বাকিগুলো লেজারে তোলার আগেই চুরি গেছে। তিনি বলেন, যেসব চেকের তথ্য আছে সেগুলোর পেমেন্ট স্টপ করার জন্য আমরা গ্রাহকদের বলেছি। গ্রাহকরা যার যার ব্যাংকে বলে পেমেন্ট স্টপ করেছে। আর যেগুলো লেজারে নেই সেগুলোর তথ্য বের করে পেমেন্ট স্টপ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করছি, কোন গ্রাহক এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হারানো চেকগুলোর মধ্যে কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের বেতনের চেক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বেতন হয় ওই শাখার এ্যাকাউন্টে। ২৬ অক্টোবর সরকারী অফিস থেকে বেতনের চেক এসেছে। কিন্তু তা হারিয়ে যাওয়ায় ডুপ্লিকেট না পাওয়া পর্যন্ত ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেতন জমা হচ্ছে না। এছাড়া পাটকল কর্পোরেশনের টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদারদের পে-অর্ডারও ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে চেক চুরির ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত সর্ববৃহৎ এই বাণিজ্যিক ব্যাংকের তরফ থেকে সোমবার মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এদিকে মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা। ঘটনাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী ঘটায়নি যা সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা যায়। গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণে দুর্ঘটনাটি সোনালী ব্যাংক বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে পরবর্তী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে। এদিকে এরই মধ্যে হারানো ওই চেক ভাঙ্গিয়ে নেয়ার চেষ্টাও হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। রোববারই রাজধানীর গুলশানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে লালমাটিয়া শাখা থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি চেক জমা দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা হয় বলে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে চেক প্রদানকারীকে ফোন করলে পালিয়ে যায় চেক জমা দেয়া ওই ব্যক্তি। সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে এ ধরনের কর্মকর্তাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
×