ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু নবেম্বরে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু নবেম্বরে

চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চউকের চুক্তি সই স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উদ্যোগে প্রায় ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে চউক ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স র‌্যানকিন জেভির সঙ্গে। কাজ শুরু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে শেষ হবে ফ্লাইওভার নির্মাণ। পাঁচ কিলোমিটারের অধিক দীর্ঘ এই উড়াল সড়ক নির্মিত হলে বন্দরনগরীতে যানজটজনিত জনদুর্ভোগ অনেকাংশেই লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ক্লাবে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও ম্যাক্স র‌্যানকিন জেবির পক্ষে গোলাম মোঃ আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ম্যাক্স র‌্যানকিনের জিএম গাউচিয়াং, সারা জাং, সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চউকের বোর্ড মেম্বার আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন, চসিকের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন, টিএ্যান্ডটির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তমাল নন্দী, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী এজাজ রসুল, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার এবং সংশ্লিষ্ট দুই সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। চউক সূত্রে জানানো হয়, মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়াল সড়কটির নামকরণ হয়েছে ‘আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার’ নামে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাবুর স্মৃতিকে চিরজাগরুক রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ ফ্লাইওভারের নামকরণ করেন। চট্টগ্রামে নির্মিত এই ফ্লাইওভারটিই হবে সত্যিকারের ফ্লাইওভার। এতে বিভিন্ন স্থানে যানবাহন উঠানামার জন্য থাকবে লুপ। চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান বসতি ও যানবাহন বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার এ ফ্লাইওভার নির্মাণের অনুমোদন দেয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ পায় চীন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স র‌্যানকিন জেভি। দক্ষ এ প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ করবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রায় ৬০ লাখ জনঅধ্যুষিত এ নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বসতি ও যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে সড়কগুলো সম্প্রসারণ ও নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নিতে হচ্ছে। যে সকল স্থানে দু’পাশে সড়ক সম্প্রসারণ সম্ভব নয় সে সকল স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে চউক চেয়ারম্যান বলেন, মাস্টার প্ল্যানে ফ্লাইওভারের উল্লেখ নেই এ অভিযোগ সত্য নয়। মাস্টার প্ল্যানের বাইরে কোন কাজে সরকার কখনই অনুমোদন দেয় না। চউকের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে করে ৪১টি ওয়ার্ডের কোন একটি ওয়ার্ড বলতে না পারে যে, তাদের উন্নয়নের বাইরে রাখা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন সড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি জানান, নগরীর উত্তর-পূর্ব অংশের উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন হাত দেয়া হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের উন্নয়ন কাজে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ শেষ হলে তা একটি বিরাট কাজ হবে বলে অভিমত রেখে তিনি বলেন, অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু আমি চাই আরও কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার প্রসঙ্গ এনে চউক চেয়ারম্যান বলেন, আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে তিনি লালদীঘির মাঠে জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নিলাম।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। উন্নয়নের যে সূচনা হয়েছে তাতে পাঁচ বছরের কর্মকা-ে চট্টগ্রাম ৫০ বছর এগিয়ে যাবে। ম্যাক্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান গোলাম মোঃ আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু আমরা ২২ থেকে ২৩ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে চাই। এ সময় জনগণের ভোগান্তি যতটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় সে চেষ্টা করা হবে। নির্মাণ কাজ চলাকালে যানবাহন চলাচলের জন্য কিছু নির্দেশনা থাকবে। যানবাহন ও পথচারীরা এ সকল নির্দেশনা মেনে নির্মাণ কাজে সহযোগিতা দেবেন বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। পুলিশের উপকমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, উন্নয়নমূলক এ কাজের জন্য জনসাধারণকে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হবে। এ সময় মুরাদপুর এলাকার সড়কের ডিজাইনে সামান্য পরিবর্তন আনা হবে, যাতে করে যান চলাচলে জটের সৃষ্টি না হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, টিএ্যান্ডটি, পিডিবিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেন।
×