ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লতিফ দেশে ফিরলেই গ্রেফতার ॥ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

লতিফ দেশে ফিরলেই গ্রেফতার ॥ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘিরে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারগুলোতে মোট এক হাজার ১৯ বাংলাদেশী বন্দী রয়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফরের সময় সোমবার দুবাইয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্থানান্তর ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এদিকে হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। দুই দফা পেছানোর পর বুধবার নিজামীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক হয়েছে। জামায়াতের এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মামলার প্রতিটি রায়ের দিনই হরতাল ডেকে বিভিন্নস্থানে তা-ব চালিয়েছে জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন শিবির। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে তারা ব্যাপক তা-ব চালায়। সে সময় সহিংসতায় প্রাণ হারায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। এছাড়া দুই শতাধিক আহত, বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়। এসব মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে বা কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে কোন ব্যবস্থা নেবে।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগারগুলোতে মোট এক হাজার ১৯ বাংলাদেশী বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১৯ এবং ২১ যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। বিভিন্ন অপরাধে দেশটির আদালত তাদের এ সাজা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তরে চুক্তি হয়েছে। আমরা দেখছি তাদের কিভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফরের সময় সোমবার দুবাইয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্থানান্তর ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। এ দেশে কাজ করছেন দশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী। দেশটি আগে নিয়মিত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিলেও ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তা বন্ধ করে দেয়। সেখানে বাংলাদেশীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার হার বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিক না নেয়ার সিদ্ধান্ত অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষর প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর ও নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তিনি নিজে। আমিরাতের পক্ষে ছিলেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাইফ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এ সময় উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি স্থানান্তর চুক্তির আওতায় উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে আসামি হস্তান্তর করতে পারবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যে ধরনের চুক্তি আছে, এক্ষেত্রেও সেভাবেই হয়েছে। এটি একটি মানবিক চুক্তি, উভয় দেশের স্বার্থই এতে রক্ষিত হবে। মন্ত্রিসভার অনুসমর্থনের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে বলে জানান তিনি। হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা তো দেয়াই আছে। সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্য করায় ৭৭ বছর বয়সী লতিফের বিরুদ্ধে এদেশের বিভিন্ন আদালতে অন্তত তিন ডজন মামলা হয়েছে; যার মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি আদালতের সমনে হাজির না হওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার সারা দেশে হরতালও করেছে কয়েকটি ইসলামী দল। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব চালিয়ে আসা লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তবলীগ জামাত; দুটোর ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তবলীগের বিরোধী।’ তার ওই মন্তব্য নিয়ে সারা দেশে তুমুল আলোচনার মধ্যেই গত ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর গত ২৪ অক্টোবর তাকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে না ফিরে লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন । দেশে ফিরতে না পারলে কলকাতা বা শান্তি নিকেতনে থাকতে চান বলেও ইতোমধ্যে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ বলেছেন, দেশে ফিরতে না পারলে ‘বাঙালী পরিবেশেই’ তিনি থাকতে চান।
×