ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হতে সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ ॥ মুহিত

১২ স্বল্পোন্নত দেশের বৈঠক শুরু অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং দেশের উন্নয়নে যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সে তুলনায় কাক্সিক্ষত সাড়া দিচ্ছে না উন্নয়ন সহযোগীরা। তিনি জানান, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। ২০২০ সালের মধ্যে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো থেকে ১৫ শতাংশ দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ৫ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ সম্পদের যথাযথ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে অর্থ সহায়তা নিয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। উপস্থিত ছিলেন ইউএনএসকাফের সেক্রেটারি জেনারেল শামসদ আখতর, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন প্রমুখ। এ বৈঠক চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএসস্ক্যাপ) এবং ইউনাইটেড নেসনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল এ্যাফেয়ার্সের (ইউএনডেসা) যৌথ উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বের কাছে অতীতের তুলনায় বেশ ভাল। দেশে বর্তমানে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। আশা করছি আমরা খুব তাড়াতাড়ি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে পারব। সভাপতির বক্তব্যে এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা বর্তমানে আমাদের যে হারে সহযোগিতা দিচ্ছে তা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু তারপরও কাক্সিক্ষত নয়। এই হার বাড়াতে হবে। অংশগ্রহণকারী ১২টি স্বল্পোন্নত দেশ হতে ৫৫ জন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন এ বৈঠকে। বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন ৩১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আঞ্চলিক এ বৈঠকে সুনির্দিষ্ট ইস্যুর ভিত্তিতে ৭টি কার্যসভায় বিভক্ত করা হয়েছে যেমন, ইউএনডিসা এর কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) উত্তরণ সূচক নির্ধারণ সম্পর্কে আলোচনা ও মূল্যায়ন, ১২টি স্বল্পোন্নত দেশসমূহের কাক্সিক্ষত উত্তরণের জন্য আর্থিক চাহিদা নিরূপণ করা, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা, অর্জিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় নির্ধারণ করা হবে। সূত্র জানায়, স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে জাতিসংঘ থেকে ১৯৬০ সালে। তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হয় ১৯৭১ সালে। এলডিসির তালিকা থেকে বের হতে তিনটি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় ওই সময়। প্রথমত, তিন বছর সংশ্লিষ্ট দেশের গড় মাথাপিছু আয় একই থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকের শর্ত পূরণ করতে হবে। আর তৃতীয়ত, কৃষি উৎপাদন, আমদানি-রফতানি, বাণিজ্য, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা থেকে উত্তরণে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) প্রতি তিন বছর পর এসব মানদ- পর্যালোচনা করে। যেসব দেশ শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়, তাদের এলডিসির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে বিশ্বে ৪৮টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য তৈরি করা কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, তিনটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বাংলাদেশ দুটিতে খুবই ভাল অবস্থানে রয়েছে। সেগুলো হলো বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনসহ গত তিন বছর গড় মাথাপিছু আয় একই অবস্থানে রয়েছেই, বরং উত্তরোত্তর বেড়েছে। ২০১২ সালে সিডিপি থেকে ঘোষণা করা হয়েছে কোন দেশের তিন বছর গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলার থাকলে সেটি শর্ত পূরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয়ও এক হাজার ১৯০ ডলার। যদিও তিন বছর পর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়। সে হিসাবে আগামী বছর এই হার নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। তবে এই সূচকে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্যের হারও কমে সাড়ে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ভাল, যা ইতোমধ্যেই ইউএনডিপিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এলডিসির তালিকা থেকে বের হতে যেসব সূচক পূরণ করতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রায় সব শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। সেমিনারে অংশ নেয়া দেশগুলো বর্তমানে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে পিছিয়ে রয়েছে। এসব সূচক অর্জনে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে সম্পদ আহরণের দিকে। কারণ এসব সূচক অর্জনে দরকার প্রচুর বিনিয়োগের। যেসব উন্নত দেশ থেকে সরকারী পর্যায়ে (ওডিএ) সহযোগিতা কম পাওয়া যায়, তাদের আর বেশি অর্থ ছাড় করার বিষয়ে ১২টি দেশ ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বৈঠকে তিন দিনে বাজার সুবিধা, বাণিজ্য সহজীকরণ, এইড ফর ট্রেড, ওডিএ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সৃজনশীল প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সাউথ সাউথ কো-অপারেশন নিয়েও ১২টি দেশের নীতিনির্ধারকরা আলোচনা ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
×