ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে সঠিক হলেও এ নির্বাচন নিয়ে হতাশা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লিন ফিদারস্টোন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফিদারস্টোন এ আহ্বান জানান। অপরদিকে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ নির্ধারণ করা হলে তা হবে বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতির স্ববিরোধিতা। লিন ফিদারস্টোন তিন দিনের সফরে গত রবিবার ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত ঢাকার গার্লস সামিটে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা সফরের শেষ দিনে মঙ্গলবার ব্রিটিশ হাইকমিশনে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন যুক্তরাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন ও ডিএফআইডির বাংলাদেশ প্রতিনিথি সারাহ কুক। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে লিন ফিদারস্টোন বলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে হলেও এ নির্বাচনে দেশের অর্ধেক মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এটা খুবই হতাশাজনক। তিনি বলেন, প্রতি ৫ বছর পর এখানের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি সহিংসতার চক্র তৈরি হয়েছে। এই সহিংসতার চক্র থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে একটি সমাধানে আসা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে গার্লস সামিটে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী নারীদের বিয়ে ও ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী নারীদের বিয়ে রোধ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। এখন যদি মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর করা হয়, সেটা হবে সরকারের গৃহীত নীতির স্ববিরোধিতা। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ নিয়ে এই কয়েক দিনে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে সকলেই বলেছেন, এ বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক একটি আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমি আশা করি সরকার বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য মেয়েদের বিয়ের হার ৬৫ শতাংশ। এখানে প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজনই বাল্য মেয়ে বিয়ের শিকার হন। যেটা বিশ্বের মধ্যে এখন চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারকে আরও কাজ করতে হবে। নারীদের নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে অধিকার থাকা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে এটাই আমার প্রথম সফর। এখানে নারী সহিংসতার শিকার অনেক তরুণীদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি দেখেছি। তারা নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ব্রিটিশ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামাজিক সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিয়ের হার বেড়ে থাকে। এ সব থেকে বেরিয়ে এলেই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিশ্বজুড়েই সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশও নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বিশ্বজুড়ে যে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে, সেটা সফল হলে অবশ্যই এই সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হবে। রাজধানীর মিরপুরে একটি বস্তি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফিদারস্টোন বলেন, মিরপুরের একটি বস্তিতে আমি গিয়েছি। সেখানে দেখেছি যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ে ও সহিংসতা প্রতিরোধে কমিউনিটি গ্রুপ কাজ করছে। এ ধরনের কাজ সমাজে খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানিকগঞ্জে একটি গ্রাম পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফিদারস্টোন বলেন, মানিকগঞ্জে দেখেছি গ্রামের লোকেরা সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করছে। এই সৌরবিদ্যুত ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময় ধরে পড়াশোনা করতে পারছে। একই সঙ্গে সৌরবিদুতের ফলে তাদের রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাড়ছে। যুক্তরাজ্য সরকার সৌরবিদ্যুত সহায়তা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশের গ্রাম এলাকার ৫০ লাখ মানুষ বিদ্যুত সহায়তা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×