ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এই মামলা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযুক্তরা সবাই দায়মুক্ত-

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযুক্তরা সবাই দায়মুক্ত-

এই মামলা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি ॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ঘটনায় বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছিল তা প্রমাণ হলো না। এই কারণে গতকাল ২৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোঃ জহুরুল হকের আদালতে দুদকের এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষে আদালত সাত আসমিকে দায়মুক্তি দিয়েছে। আর সন্দেহভাজন হিসেবে যে দুজন ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরী তাঁদের ব্যাপারে অভিযোগের সঙ্গে কোন রকম সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহতি পেয়েছেন। ফলে এই ঘটনার বিষয়ে আর কোন বিচারের ও পুনর্তদন্তের সুযোগ থাকলো না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযোগ মিথ্যে হওয়ার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ইন্ট্রিগ্রিটি বিভাগের অভাব আছে। শুধুই তাই তাঁদের সততাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখন তাঁদের উচিত ওই বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা মিথ্যে অভিযোগ করেছিল এর তদন্ত হওয়া। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত মহাজোট সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা হলেন কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ, সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের ও এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ মোস্তফা। মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত একটি ঘটনার নিষ্পত্তি ঘটল। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, একবার মামলা শেষ হয়ে গেলে ও ফাইনাল রিপোর্ট হলে আর সেই মামলায় কিংবা ঘটনার পুনর্তদন্ত করার বিধান নেই। এই ঘটনার ও মামলারও কোন পুনর্তদন্ত করা যাবে না। অনেকেই বলেছেন বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে আগামীতে পুনর্তদন্ত করে এর বিচার হবে। আইনজীবীদেরও কেউ কেউ বলেছেন, এটা রিভিউ ও পুনর্তদন্ত করা যাবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন আসলে এটা সম্ভব নয়। যাঁরা এই কথা বলেছেন তাঁরা আইন না জেনেই বলছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, চাইলে পুনর্তদন্ত করতে পারে। তবে লাভ হবে না। কারণ এই ঘটনায় কোন প্রমাণ দেশে-বিদেশে মেলেনি। তবে ওই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছিল সেটা ছাড়াও যাদের সন্দেহজনক রাখা হয়েছিল এটা না রাখলেই ঠিক হতো। যাদের নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিল তাদের দাবি, আমাদের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে রাখাটা আইনসম্মত নয়। এর আগে কোন মামলায় কোন দিন এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এফআইআরে নাম রাখা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যাঁরা করেছেন তাঁরা কাজটি ঠিক করেননি। তাঁরা আমাদের যে ক্ষতি করেছেন তা কি কোন দিন মুছে যাবে। দুদকের চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান বলেন, ওই সময়ে বিশ্বব্যাংকের চাপেই মামলা করা হয়েছিল। সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন কিছু না পাওয়ার পরও সমালোচনা আর বিতর্ক এড়াতে তাদের নাম মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রাখা হয়েছিল আমরা এটা স্বীকার করি যে কাজটি ঠিক হয়নি। আমরা তাদের নাম না রাখলে বলত যে ইচ্ছে করেই এটা আমরা করেছি। তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন তো প্রমাণ হয়েছে তারা জড়িত নন। এটাও স্বীকার করি তাদের নাম দেয়ার কারণে তারা ইমেজে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু আমরা ছেড়ে দিলে বরং সেটা এখনকার চেয়ে খারাপ হতো। এখন তারা তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। আর তা না দিলে অভিযোগটা থেকেই যেত। এখন আর নেই। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসএনসি লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগের ঘটনায় বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছিল দুর্নীতি হয়েছে। এই কারণে তারা অর্থায়নও স্থগিত করে। পরে তারা তদন্ত করার দাবি জানায়। সেই অনুযায়ী অনুসন্ধানও শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিও এখানে আসেন। তারা ওই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ থেকে অপসারণ করানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ দেন। দুদককে তাকে আসামি করে মামলা করতে বলেন। কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় ও দুদক তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। কিন্তু পরে সমালোচনা এড়াতে নিয়মের বাইরে দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে রাখে। দুদক পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ঘটনা নিয়ে ২০১২ সালে বনানী থানায় সাতজনকে আসামি করে ১৭ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলা নম্বর ১৯। ধারা দ-বিধির ১৬১ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, যা দ-বিধির ১২০(বি) ধারার অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে দুদক। ওই মামলার বাদী ছিলেন দুদকের উপরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ। অভিযোগ ছিল, আসামিরা একে অপরকে আর্থিকভাবে লাভবান করার অসৎ অভিপ্রায়ে অপরাধ মূলক অসদাচরণ ও বিধি বিধান ভঙ্গ করে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএনসি লাভালিনকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। আসামি ছিলেন মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, কাজী মোঃ ফেরদাউস, মোঃ রিয়াজ আহমেদ জাবের, মোহম্মদ মোস্তফা, মোহাম্মদ ইসমাইল, মি. রমেশ শাহ, ও মি. কেভিন ওয়ালেস, সন্দেহভাজন সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরী। ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে তাতে মামলা থেকে সাতজন আসামির দায়মুক্তি চাওয়া হয়েছে। বাকি সন্দেহভাজন থাকা দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় তারা আসামি না হওয়ায় এমনিতেই দায়মুক্তি পান। তাদের নামে এই কারণে আলাদা করে দায়মুক্তি চাওয়া হয়নি। ওই মামলায় মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, কাজী মোঃ ফেরদাউসকে ২৬ ডিসেম্বর ২০১২তে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মোঃ রিয়াজ আহমেদ জাবের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তখন তার জামিন বাতিল করে ও রিমান্ডের আবেদন করা হয়। তার রিমান্ড মুঞ্জর হলে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, কাজী মোঃ ফেরদাউস জামিনে রয়েছেন। তাঁদের ওএসডি করা হলেও পরে আবার তাঁরা কাজ শুরু করেন। ওই মামলায় গত মাসে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল আলম। সেখানে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন। ফৌজদারি বিধান কোষের ১৭৩ ধারামতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। রিপোর্ট নম্বর ৮৭। তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪। এই মামলা আর চলবে না বলেও উল্লেখ করেছেন। দুদকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তা আদালতে দাখিল করার অনুমতি দিয়েছে। এরপর তা দাখিলও করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২৬ অক্টোবর এটি শুনানির দিন ছিল। সেই হিসেবে গতকাল তা শেষ হয়। সবাই খালাস পেয়ে যান। দুদকের আইনজীবী মীর আব্দুস সালাম ও মোঃ কবির হোসাইন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানির পর মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।
×