ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হলো বাংলাদেশ। গত শুক্রবার চীনের তৈরি অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। চীনের রাজধানী বেজিং এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশসহ আরও ২১টি দেশ নতুন এ ব্যাংকের সদস্য হতে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। দেশগুলো হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভারত, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখাস্তান, কুয়েত, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, লাওস, নেপাল, ওমান, ফিলিপিন্স, কাতার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে চীনের তৈরি এ ব্যাংকে যোগ দেয়নি দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাপান। এর আগে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানায় চীন। এতে বলা হয় যেসব দেশ শুরুতেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে তারা সবাই এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মর্যাদা লাভ করবে। পরে যারা যোগদান করবে, তারা শুধু সদস্য হিসেবে গণ্য হবে। এ প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে চীনের এআইআই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়া এবং সমঝোতা স্মারকে সই করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশের চীনের এ ব্যাংকে যোগ দেয়ার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এর আগে বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের আইডা এখনও সবচেয়ে সহজ শর্তে ঋণ দেয়। কিন্তু চীনের ব্যাংকের সুদের হার কি হবে, গ্রেস পিরিয়ড কি হবে এবং তাদের ঋণ পেতে কি ধরনের শর্ত থাকবে সেসব বিষয় এখনও জানা যায়নি। তবে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন যেটি আমাদের একার পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের আইডা থেকে বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ঋণ দেয়া হয়, যা ১৮০টি দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই বাংলাদেশের শুধুমাত্র অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতগুলো বাদ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয় এর বাইরে আরও একটি অপশন যোগ হচ্ছে। সূত্র জানায়, ব্যাংকটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সদস্য দেশগুলোকে অবকাঠামো খাতে ঋণ দেয়া। এর অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০ শতাংশ আসবে সদস্য দেশগুলো থেকে। আগামী বছরই ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে চীন সরকার বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে এআইআইবি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ, সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এই ব্যাংক থেকে মূলত অবকাঠামো খাতেই ঋণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে থাকবে বিদ্যুত ও জ্বালানি, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন্স। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো, কৃষি উন্নয়ন, নগর উন্নয়নেও চীনের ব্যাংকটি ঋণ দেবে। এআইআইবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারবে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এর বাইরের অন্য কোন দেশ তা হতে পারবে না। এআইআইবি কাঠামো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে থাকবে বোর্ড অব গবর্নস। এর পর থাকবে বোর্ড অব ডিরেক্টরস। তৃতীয় ধাপে থাকবে ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা। বোর্ড অব ডিরেক্টরসে যাঁরা সদস্য থাকবেন তাঁরা হবেন অনাবাসিক। এই কমিটি বছরে চারবার বৈঠকে বসবে। এই কমিটির কাজ হবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনার কর্মকা- মনিটরিং এবং কৌশলগত নির্দেশনা দেয়া। ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান হতে পারবেন। পাশাপাশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রেসিডেন্ট।
×