ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবের রাজসিক প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

সাকিবের রাজসিক প্রত্যাবর্তন

ফিরেই ৬ উইকেট, জিম্বাবুইয়ে ২৪০/১০, বাংলাদেশ ২৭/১ মোঃ মামুন রশীদ ॥ টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। একই সঙ্গে বোলিং ও ব্যাটিংয়ে অন্যতম স্তম্ভ দলের। মাঠে তাঁর উপস্থিতিই অন্যরকম এক অনুপ্রেরণা সতীর্থদের জন্য। কিন্তু সেই সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহের কথার অবাধ্য হওয়া এবং দর্শক গ্যালারিতে গিয়ে মারামারির ঘটনায় ৬ মাসের জন্য অপরিহার্য এই ক্রিকেটারকেই ৬ মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু ক্যারিবীয় সফরে তাঁর অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশ শিবির। অবশেষে শাস্তি কমিয়ে আনার পর মাত্র আড়াই মাসেরও কম সময় মাঠের বাইরে থাকার পর ফেরেন অনুশীলনে। খেলেছেন এশিয়ান গেমসেও। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেটশিকারী সাকিব। আর বাংলাদেশের চরম প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ফিরেই ভেল্কি দেখিয়েছেন বোলিংয়ে। নিয়েছেন মাত্র ৫৯ রানে ৬ উইকেট। ক্যারিয়ারে দ্বাদশ বারের মতো ৫ উইকেট বা তারচেয়ে বেশি শিকার করার গৌরব হলেও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এই প্রথম তিনি এ কৃতিত্ব দেখালেন। তাঁর ভয়াল ঘূর্ণি বলের কারণেই সফরকারী জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেছে মাত্র ২৪০ রানে। বর্তমানে অলরাউন্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে থাকলেও দীর্ঘদিন শীর্ষ আসনে আসীন সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনটা হলো তাই রাজকীয় বেশেই। এ বছর মাত্র চারটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে দুই টেস্টে ৯ উইকেট নিয়ে সাকিবও চলতি বছরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট শিকারী। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেই সর্বাধিক ১২২ উইকেটের মালিক হিসেবে সাকিব জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মাঠে ফিরলেন। গত জুলাইয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ১৬ সেপ্টেম্বর আবার অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছিলেন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর। এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে হওয়া এশিয়াড ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ফিরেছিলেন। আর এখন ফিরলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আগে খেলা ৩ টেস্টে মাত্র ৮ উইকেট নিতে পেরেছিলেন। প্রতিপক্ষকে টেস্ট ক্রিকেটে অলআউট করতে যে বোলিং আক্রমণ প্রয়োজন তা অনেকটাই দুর্বলতর হয়ে পড়ে সাকিবের মতো স্পিন জাদুকরের অভাব থাকলে। সেটা এবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে বেশ ভালভাবেই পরিলক্ষিত হয়েছে। দুই টেস্টের সিরিজে প্রতিপক্ষকে অলআউট করা দূরে মাত্র ২১ উইকেট নিতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ব্যাটিংয়ে মিডল অর্ডারের স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তাই সেক্ষেত্রেও সাকিবের অভাব দেখা গেছে। তবে আবার ফিরলেন তিনি। ক্যারিবীয় সফরে দুই টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপটা ঝাড়তে শুরু করলেন জিম্বাবুইয়ের ব্যাটিং লাইনআপে। সাকিবের ঘূর্ণিতে আগুন। সেটা ভালভাবেই টের পেল জিম্বাবুইয়ের ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের অষ্টম ওভারেই দলের অন্যতম ভরসা সাকিবের হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক মুশফিক। মেডেন দিয়ে শুরু। টানা দুটি মেডেন দেয়ার পর ব্যক্তিগত তৃতীয় আর ইনিংসের দ্বাদশ ওভারেই আঘাত হানলেন তিনি। ক্রমেই উইকেটে থিতু হতে থাকা ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে শুরু করলেন ধ্বংসের কাজটা। তাঁকে আর রুখতে পারেনি জিম্বাবুইয়ের ব্যাটসম্যানরা। একের পর আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান আত্মসমর্পণ করেছেন তাঁর বোলিংয়ের সামনে, একের পর এক উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাঁর স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে গেছেন এলটন চিগুম্বুরা, রেগিস চাকাবভা, জন নিয়ুম্বু, তিনাশে পানিয়াঙ্গারা ও তাফাদজাওয়া কামুনগোজি। ৬ উইকেটে ২০০ রান থেকে জিম্বাবুইয়ের ইনিংস আর মাত্র ৪০ রানে গুটিয়ে গেছে সাকিবের ভয়াল ঘূর্ণির একক দাপটে। মাত্র ৫৯ রানেই ৬ উইকেট নিয়ে রাজার বেশেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন তিনি। এখন পর্যন্ত এ বছর এনিয়ে ৪ ইনিংস বোলিং করে ১৫ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে তিনিই সবার ওপর। আর সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারে ১২৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেও তিনিই সবার শীর্ষে। তবে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এর আগে কখনও ৫ উইকেট পাননি। এবারই প্রথম বাংলাদেশের চিরশত্রুর বিরুদ্ধে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এনিয়ে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ইনিংসে ৬ উইকেট বা তারচেয়ে বেশি শিকার করার গৌরবও দেখালেন। তবে ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ৫ উইকেট বা তারচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের ঘটনা তিনি এনিয়ে ঘটালেন দ্বাদশবারের মতো। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ব্যতীত সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধেই এমন কৃতিত্ব দেখানো শেষ। অসিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচই খেলেননি তিনি। তবে দিনশেষে জানালেন প্রত্যয়, ‘ওদের বিরুদ্ধে যেহতু খেলিনি তাই বলা যাচ্ছে না কি ঘটবে। তবে যখন খেলব অবশ্যই ভাল করার প্রচেষ্টা থাকবে। খেলে যদি পাঁচ উইকেট নিতে পারি সেটা আমার জন্য এবং দলের জন্যও ভাল হবে।’
×