ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিংবদন্তিরা আসছেন মাতাবেন ১৬০ শিল্পী, চলছে প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

কিংবদন্তিরা আসছেন মাতাবেন ১৬০ শিল্পী, চলছে প্রস্তুতি

নবেম্বরে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব মোরসালিন মিজান উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আশ্চর্য সুন্দর আসর। বাংলাদেশে। একদিন দু’দিন নয়। ৫ দিনব্যাপী উৎসব। না, কোন মিলনায়তনে নয়। পাঁচ তারকা হোটেলের বলরুমে নয়। রাজধানী ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে। বিশাল এই স্টেডিয়ামে সুরের খেলা শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে। সারা রাত ধরে চলে। বিরতিহীন। ক্ল্যাসিকেল মিউজিক। কে শোনবে? এই প্রশ্ন এক সময় উঠেছিল বৈকি। তবে ওই ওঠা পর্যন্তই। শ্রোতা না পাওয়ার আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করেছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসর থেকেই হাজার হাজার শ্রোতা। বিভিন্ন বয়সী মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করেন উপমহাদেশের বড় বড় উস্তাদের পরিবেশনা। প-িতদের কণ্ঠ যন্ত্রসঙ্গীত শ্রোতাদের বাড়ি ফিরতে দেয় না। এই দৃশ্য সত্যি অভাবনীয়। একবার এমন উৎসবের আয়োজন করতে পারাই অনেক বড় কথা। গৌরবের বিষয়। অথচ প্রতিবছর একই সময়ে উৎসবটি আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন আয়োজকরা। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার আয়োজন করা হচ্ছে তৃতীয় আসর। বর্ণাঢ্য উৎসবের উদ্বোধন আনুষ্ঠানিক করা হবে ২৭ নবেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। চলবে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আয়োজক সূত্র জানায়, এবারও প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সরব থাকবে মঞ্চ। পরিবেশিত হবে কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত। ক্ল্যাসিকেল নৃত্যের পরিবেশনা নিয়ে আসবেন বিখ্যাত শিল্পীরা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জানান, এ বছর উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনকে। পঞ্চান্ন ঘণ্টার এই সঙ্গীত সম্মেলনে ভারত ও বাংলাদেশের ১৬০ শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের সম্মেলক বাংলা গান দিয়ে সূচনা করা হবে প্রথম দিনের অধিবেশন। সম্মেলক গানের কারণে এবারের উৎসবে বাংলাদেশী শিল্পীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭৫ জনের নাম। তবে এই আয়োজনে মঞ্চ আলোকিত করে রাখেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীরাই। সে তালিকায় এবারও আছেন প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, প-িত উলহাশ কাশালকার, বিদুষী গিরিজা দেবী, ওস্তাদ আমজাদ আলী খান, ওস্তাদ রশিদ খান, শিবু কুমার শর্মা, অজয় চক্রবর্তী, কৌশিকী চক্রবর্তী, প-িত তেজেন্দ্র মজুমদারের মতো বিখ্যাত শিল্পী। লুভা নাহিদ জানান, বিখ্যাত এই শিল্পীদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। সবাই উৎসবে আসার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী। ঘোরতর কোন সমস্যা দেখা না দিলে গত দুই বছর যাঁরা উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের প্রায় সবাই আসবেন। গত দুই বছর আসতে পারেননি এমন ওস্তাদ এবং প-িতরাও তৃতীয় আসরে যোগ দেবেন। এই তালিকায় রয়েছেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী পদ্মবিভূষণ বিদুষী কিশোরী আমানকর। তবে শিল্পীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে আরও একটু সময় লাগবে বলে জানান তিনি। উৎসবের বাদবাকি প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগে দুইবার উৎসবটি আয়োজনের ফলে আমরা এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আমাদের প্রচুর লোকজন উৎসব সফল করতে রাতদিন কাজ করছেন। সব ঠিক থাকলে এবারও সফল হব আমরা। তৃতীয় আসরটি প্রসঙ্গে মূল আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের লিটু বলেন, গত বছর এক রাতে ৩৬ হাজার দর্শক জড়ো হয়েছিলেন। এবার রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল। ফলে প্রতিরাতে অর্ধলক্ষ শ্রোতার সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি আমরা। কেন এই আয়োজন? জানতে শিল্পের এই পৃষ্ঠপোষক বলেন, সঙ্গীতের মূল রস তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে। এক সময় এই ধারার সঙ্গীতে আমাদের দেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। সে ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের একটি চেষ্টা বলতে পারেন। সেই সঙ্গে শ্রোতা ও শিল্পী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। এই উৎসব শ্রোতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন তিনি। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসব উপভোগের জন্য কোন টিকেটের প্রয়োজন হবে না। ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করে উপভোগ করা যাবে উৎসব। ৩ নবেম্বর থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এ জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট (http:/ww/w.bengalfoundation.org) ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছেন উৎসবের আয়োজকরা।
×