ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিএভি মামলাগুলোর শীঘ্রই রায়

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

সিএভি মামলাগুলোর শীঘ্রই রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত তিন আসামি অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছেন। এরা হলেন ৯০ বছরের দ-প্রাপ্ত আসামি গোলাম আযম, আমৃত্যু দ-প্রাপ্ত আব্দুল আলীম, বিচারাধীন অবস্থায় একেএম ইউসুফ। আর আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে আপীল ও দুটি ট্রাইব্যুনালে মোট সাতটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য (সিএভি) রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আপীল বিভাগে দুটি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছেন সিএভিকৃত মামলাগুলোর রায় শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে আরও নতুন মামলা আসছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, এ পর্যন্ত আমরা বেশ কিছু মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। যার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি মামলার রায় প্রদান করেছেন। কিছু মামলা সিএভি রাখা হয়েছে। আরও কিছু মামলার বিচার কাজ চলছে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই কয়েকটি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে তাদের নাম প্রকাশ করছি না। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দ- দেয়ার পর দুইজন এবং বিচারাধীন অবস্থায় একজন আসামির মৃত্যু হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনাল ৯০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। তিনি ২৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের দ- মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধেও ট্রাইব্যুনাল আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট মারা যান। অন্যদিকে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফের সাক্ষী চলাকালীন সময়ে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান। ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেন। আপীল বিভাগ সেই দ- বাড়িয়ে ঐ বছরের ১৭ আগস্ট ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। তার রায় ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়। এছাড়া বর্তমানে আপীল বিভাগ ও দুটি ট্রাইব্যুনালে সাতটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। আপীল বিভাগে রায় ঘোষণার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলাটি সিএভি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি ট্রাইব্যুনালে ছয়টি মামলা সিএভি রাখা হয়েছে, মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মীর কাশেম আলী, বিএনপির পলাতক মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত নয়টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত আব্দুল আলীম, ৯০ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বিচারাধীন অবস্থায় রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফ অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে দ-ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। গোলাম আযমের মামলাটি আপীল বিভাগে শুনানির জন্য ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার কারণে এখন আপীল বিভাগ একটি আদেশ প্রদান করবেন। মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী মামলাটি অকার্যকর হয়ে যাবে। পাশাপাশি দ-প্রাপ্ত বাচ্চু রাজাকার ওরফে আবুল কালাম আজাদ, বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নায়ক আলবদর বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং চীফ এক্সিকিউটর মোঃ আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তারা দ-ের বিরুদ্ধে কোন আপীল করেননি। দুটি আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবনের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। সে রায় কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেছেন আপীল বিভাগ। দীর্ঘদিন হলেও ট্রাইব্যুনাল থেকে কোন রায় আসছে না। এ ব্যাপারে জনমনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ বলছেন, যখন বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য মামলা অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। তখন রায় হবেই। এ নিয়ে অহেতুক কিছু না বলাই ভাল। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেছেন, জনমনের আকাক্সক্ষা আছে শীঘ্র রায় ঘোষণা করা হোক। আমরাও জনগণের আকাক্সক্ষার সঙ্গে একমত। আশা করছি যে কোন দিন আপীল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলোর রায় ঘোষণা করা হবে। আপীল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল নিয়ম অনুযায়ীই রায় ঘোষণা করা হবে।
×