ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেগম জিয়ার হাজিরা না দেয়ার অজুহাত হিসেবেই আজ হরতাল

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

বেগম জিয়ার হাজিরা না দেয়ার অজুহাত হিসেবেই আজ হরতাল

সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ শংকর কুমার দে ॥ কতিপয় ইসলামী দলের রবিবারের হরতাল কেন ? হরতাল ডাকার নেপথ্যের ‘রহস্যাবৃত’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। রবিবারের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে ডাকা হরতালের নেপথ্যে রয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, লতিফ সিদ্দিকী তো বিদেশে। সরকার তাকে গ্রেফতার করবে কিভাবে ? ইসলামী দলগুলোও জানে সরকার ইচ্ছে করলে তাঁকে বিদেশ থেকে এনে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করতে পারবে না। তাহলে হরতাল কেন ? নেপথ্যে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারের পতন ঘটানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন চাঙ্গা করতেই লতিফ সিদ্দিকী ইস্যু সামনে এনে হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী দলগুলো। ইসলামী দলগুলোর ডাকা রবিবারের হরতালের দিনেই বেগম জিয়ার দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরা দেয়ার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ। আদালতে হাজির না হওয়ার একটি অজুহাত তৈরির জন্যও হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। হরতালের নৈরাজ্য ও নাশকতা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থা উল্লেখ করেছে, হজ ও তবলীগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে থাকা অবস্থায়ই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। তারপর মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁকে। এমনকি তাঁকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্নস্থানের আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়েছে। দেশে থাকলে এতদিনে লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার হতেন, এমনকি তাঁকে যে কারাগারে পাঠানো হতো তা এতসব আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকার যেভাবে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নজিরবিহীন। তার পরও ইসলামী দলগুলো লতিফ সিদ্দিককে গ্রেফতারের দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে হরতাল ডাকল কেন? বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে সফরে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে কঠোর বক্তব্য দিচ্ছেন তার নেপথ্যে ইসলামী দলগুলোর গোপন সমঝোতা। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের একটি গোপন বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। আগামীতে সরকারবিরোধী যে আন্দোলন হবে তাতে তারা অংশী নেবে ইসলামী দলগুলো। সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আন্দোলনের যে হুঙ্কার দিচ্ছে, তাতে ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণের ইঙ্গিত হিসেবেই হরতাল ডাকা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রবিবার যেদিন ইসলামী দলগুলো হরতাল ডেকেছে সেদিনই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে একটি দুর্নীতির মামলায় হাজির হওয়ার পূর্ব নির্ধারিত দিন। রবিবার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজিরা দেয়ার কথা আছে। হরতালের কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির না হওয়ার একটি অজুহাত তৈরি করে দিতে ইসলামী দলগুলো হরতালের ডাক দিয়েছে। এটাও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি ইসলামী দলগুলোর গোপন বৈঠকের সমঝোতার ফসল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
×