ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ঋণ পরিশোধ হওয়ার ভাবনায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২০ জুলাই ২০২৫

ঋণ পরিশোধ হওয়ার ভাবনায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

ছবিঃ সংগৃহীত

ঋণ পরিশোধের ভাবনায় স্ত্রী মোসাঃ সাজেদা বেগম (৫৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন স্বামী তৈয়ব হাওলাদার।

ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উপজেলার চাওড়া পাতাকাটা গ্রামে, শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

জানা গেছে, উপজেলার চাওড়া পাতাকাটা গ্রামের তৈয়ব আলী হাওলাদার তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের নামে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। ঋণের টাকা আদায়ে এনজিও সংস্থাগুলো তৈয়বের স্ত্রীকে চাপ দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্বামী তৈয়ব হাওলাদারের ধারণা ছিল, ঋণগ্রহীতা মারা গেলে ঋণ পরিশোধ করতে হয় না। এ ধারণা থেকেই শনিবার রাতে তিনি তার স্ত্রী সাজেদাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে তিনি তাকে আমতলী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থা খারাপ দেখে মেয়ে মরিয়ম বেগমকে মুঠোফোনে মারধরের বিষয়টি জানিয়ে তৈয়ব পালিয়ে যান। পরে মেয়েরা হাসপাতালে এসে সাজেদাকে নিয়ে বরিশালে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়।

প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে তৈয়ব হাওলাদার ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে কাঠের ভারী বস্তু দিয়ে সাজেদা বেগমকে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। সাজেদা বেগমকে ওই দিন রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পটুয়াখালী হাসপাতালে যাওয়ার পথে আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের সন্তান মোসাঃ মরিয়ম বেগম বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে বাবা তৈয়ব হাওলাদার তাকে ফোনে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে বলেন। তিনি আসার পর মা সাজেদা বেগমকে তার কাছে রেখে টাকা আনার কথা বলে বাবা তৈয়ব হাওলাদার পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।

তৈয়ব হাওলাদারের বাড়ির এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা বলেন, প্রতিনিয়তই তৈয়ব ও সাজেদার মধ্যে ঝগড়া-মারধরের ঘটনা ঘটত। মুখে কাপড় গুঁজে মারধর করত যাতে আশপাশের মানুষ শব্দ শুনতে না পায়। তিনি আরও বলেন, তৈয়ব হাওলাদার তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। ঋণ পরিশোধ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

তিনি আরও বলেন, তৈয়ব হাওলাদার মারধরের সময় প্রায়ই বলত, "তোকে মারলেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে না, আমি তাই করব।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈয়ব হাওলাদারের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, গুরুতর জখম অবস্থায় সাজেদা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন ছিল।

আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরেই স্ত্রীকে পিটিয়ে স্বামী হত্যা করেছেন। ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ইমরান

×