
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় মাথাপিছু ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।তালিকায় নাম দিয়েও কোনো পরিবার পায়নি টাকা, আবার একই পরিবারের তিন, চারজনের নামে বিকাশে টাকা এসেছে। এই টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় পৃথক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানে ৭ হাজার শ্রমিকের নামে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা প্রাপ্তির জন্য বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও বিকাশ নম্বর তালিকাভুক্ত করে সমাজসেবা অফিসে জমা দেন। তাদের জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা হারে বিকাশে টাকা প্রদান করা হয়। তালিকায় কেউ কেউ তাদের নিজেদের পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোনের নাম ও বিকাশ নম্বর জমা দিয়েছেন।
আবার অনেক নিরীহ চা শ্রমিক পরিবারের সদস্যের নাম ও বিকাশ নম্বর স্থান পায়নি। এছাড়াও একজনের আইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদকের ছেলের বিকাশে টাকা নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের এই টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও শমশেরনগর বাগানের শ্রমিক নেতা গোপাল কানু শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা রেলী।
অভিযোগ করে শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক গোপাল গোয়ালা, রিশু বাগতি, নিলু রাজভর, জগদীশ বাউরী, বাবুল রেলী বলেন, চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কপি নিয়ে কতিপয় নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ইউএনও সাহেবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
শমশেরনগর চা বাগানের বড় লাইনের শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন, ‘তালিকায় আমার নাম ও ভোটার আইডি নম্বর ঠিক আছে। টাকা আমি পাইলাম না। বিকাশ নম্বর আমার নয়। আমি মেম্বাররে কইলাম, আমার টাকা পাইলাম না।’ একই বাগানের শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, আদমটিলার শ্রমিক দুলাল শীল, রবিদাস টিলার প্রীতি পাল বলেন, আমাদের নাম, আইডি ও বিকাশ নম্বর দিয়ে তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা টাকা পাইনি।
বাগানের ভজনটিলার শ্রমিক শিমুল লোহার বলেন, অন্যের নামে আমার বিকাশে টাকা আসে। পরে আমার পাশের বাড়ির বাসিন্দা জয়প্রকাশ রাজভর এসে আমার মোবাইল নিয়ে টাকা তুলে আমাকে ২ হাজার দিয়ে বাকি টাকা সে নিয়ে গেছে। বড় লাইনের বাসিন্দা ছবি লোহার জানান, আমার আইডি ও নামে ৬ হাজার টাকা ঢুকে নির্মল ছত্রীর বিকাশে। এটি জানার ১৫ দিন পরে আমাকে ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকারভোগী তালিকায় শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা নির্মল দাস পাইনকা, তার স্ত্রী, মেয়ে ও তার আপন ভাইয়ের স্ত্রী, ভাই, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও ৩ মেয়ের নাম। একইভাবে শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, স্ত্রী রিনা কানু, ভাইয়ের বউ রিপা কানু, বোন হেমন্তি কানু, ভাই হৃদয় প্রকাশ কানু, ভাইয়ের স্ত্রী শিপা কানুর নাম ও বিকাশ নম্বর। এছাড়াও চা শ্রমিক সুরনারায়ণ রেলী সরাইয়ার পরিবারের ৮ জনের নাম ও বিকাশ নম্বর পাওয়া যায়।
শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল বলেন, তালিকা দিয়েছেন অনেকেই। যে যেভাবে তালিকা দিয়েছে, সেভাবে টাকা এসেছে। আমার ছেলের বিকাশে যার টাকা এসেছে, সে-ই আমার ছেলের নম্বর দিয়েছে। আমার পরিবারে দু’জনের নামে টাকা এসেছে। ভাইয়েরা তো আলাদা পরিবার, তারাও তো প্রাপ্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালি কমিটির সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ আমার পরিবারের তালিকা দিয়েছে, আমার জীবনে এভাবে কখনো হয়নি। এজন্য আমি নিজেই খুবই লজ্জিত।
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউসুফ মিয়া বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর কয়েকটি বাগানের অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আফরোজা