ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শ্রাবণে স্বরূপে বর্ষা, ফুলবাড়ীতে আমন আবাদে কৃষকের ব্যস্ততা

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২০ জুলাই ২০২৫

শ্রাবণে স্বরূপে বর্ষা, ফুলবাড়ীতে আমন আবাদে কৃষকের ব্যস্ততা

ছবিঃ সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে খরায় খরায় কেটেছে আষাঢ়। ফেটে চৌচির হয়েছে ফসলি জমি। আমন আবাদের মৌসুমে কৃষকদের কেটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত অবসর। তবে শ্রাবণে এসে স্বরূপে ফিরেছে বর্ষা। দেখা মিলেছে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির। ফসলি জমিতে জমেছে পানি। এতে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকদের। কৃষাণ-কৃষাণীর হাঁকডাকে মুখরিত এখন ফুলবাড়ীর মাঠপ্রান্তর।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন চাষের জমিতে কৃষকের সরব উপস্থিতি। কেউ ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছেন, কেউ জমির আইল দিচ্ছেন, কেউ আবার কাঁদা পানিতে নেমে কোমরে মইয়ের দড়ি বেঁধে জমিতে মই টানছেন। কৃষি শ্রমিকরা দল বেঁধে জমিতে আমনের চারা রোপণ করছেন। সব মিলিয়ে উপজেলার মাঠে প্রান্তরে আমন আবাদের কর্মব্যস্ততা চলছে।

উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, আষাঢ় মাসের প্রচণ্ড খরার পরে অবশেষে বৃষ্টির দেখা মিলেছে। শ্রাবণের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমায় বেশ স্বস্তিতে আছেন তিনি। সকালে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করে নিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে তিনি জমিতে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একই এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টিতে তার ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প চালু করে জমিতে সেচ দিয়ে হালচাষ করতে হয়েছে। এখন বৃষ্টি হওয়াতে জমিতে মোটামুটি পানি জমেছে। কৃষি শ্রমিক ডেকে কিছু জমিতে আমনের চারা রোপণ করছেন, অন্য জমিতে চাষ দিচ্ছেন। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষি কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

উপজেলার শাহ বাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, রোপা আমন মূলত বৃষ্টি নির্ভর আবাদ। সেচ দিয়ে আবাদ করলে ফলন ভালো হয় না। পাশাপাশি আবাদে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে আবাদ করে লাভের বদলে লোকসানের সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তবে শ্রাবণের বৃষ্টিতে তার লোকসানের সেই শঙ্কা অনেকটাই কেটেছে। এখন ফুরফুরে মেজাজে জমিতে পুরোদমে চারা রোপণ করছেন।

বৃষ্টিতে কৃষকদের পাশাপাশি স্বস্তির কথা জানিয়েছেন কৃষি শ্রমিকরাও। উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের দিনমজুর জয়নাল আবেদীন ও জাহের আলী জানান, মাঠে দিনমজুরি করেই তাদের সংসার চলে। বোরোধান কাটার সময় তাদের প্রচুর কাজ ছিল, প্রতিদিন ভালো রোজগার হতো। তবে এরপর থেকে আর কাজে যেতে পারেননি। ধান কাটার কাজ করে যা জমিয়েছিলেন তা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। খরার কারণে মাঠে কাজ না থাকায় সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। অবশেষে বৃষ্টি হওয়াতে সুদিন ফিরেছে। জমিতে আমনের চারা রোপণের কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে, এখন প্রতিদিন ভালোই আয়-রোজগার হচ্ছে।

এদিকে জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার (২০ জুলাই) জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়াতে কৃষকরা জোরেশোরে আমন আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এ বছরও আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ইমরান

×