
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বক্সগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বক্সগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি এক সময় প্রাচীন ঐতিহ্য ও ভালো মানের শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানা সমস্যার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবনগুলো এখন অপ্রয়োজনীয় এবং অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পুরনো দুটি ভবনের অবস্থাও খুবই খারাপ। এগুলোর ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়া এবং ক্লাস চলাকালে পলেস্তারা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১,০০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যা এতই বেশি যে, অনেক ক্লাস কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই, বিজ্ঞানাগার এবং পাঠাগারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ এবং একটি ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাবও নেই। এ ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত বাথরুম নেই এবং ছাত্রীদের জন্য আলাদা কমন রুমের অভাব রয়েছে। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি নামমাত্র এবং বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নেই, যা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। বিদ্যালয়ের মাঠের অবস্থাও শোচনীয়, বর্ষা মৌসুমে গর্তের কারণে মাঠে পানি জমে থাকে, যা খেলাধুলা এবং অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘœ ঘটায়।
এ ছাড়া, বিদ্যালয়ের জায়গা খালের পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষাকালে পানির তোড়ে পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আশ্রাফ বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি সাংবাদিক মজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘প্রাচীনতম এই বিদ্যালয়ের যেভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।
তবে, আমরা এ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ফিরে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’ তিনি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইউনুছ বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা ১৫-১৬টি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করেছি এবং বক্সগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামও তার মধ্যে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল আমিন সরকার বলেন, বক্সগঞ্জ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা প্রেরণ করা হবে।
পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এদিকে, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
প্যানেল হু