ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

রাজমিস্ত্রি থেকে এনজিও মালিক, অল্পদিনেই কোটিপতি! তৈরি করেছেন আলিশান বাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাটমোহর,পাবনা

প্রকাশিত: ২১:০০, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০১, ২০ জুলাই ২০২৫

রাজমিস্ত্রি থেকে এনজিও মালিক, অল্পদিনেই কোটিপতি! তৈরি করেছেন আলিশান বাড়ি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথড় মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত ছাকাত প্রামাণিকের ছেলে নুর আলী (৪৭) ও তার স্ত্রী লাইলী খাতুন (৩৩), দম্পতির নামে এনজিওর ব্যবসার আড়ালে অসৎ উপায়ে বিভিন্ন মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতারণার শিকার হয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

জানা যায়, নুর আলী দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় লেখাপড়ায় খুব একটা এগোতে পারেননি। বছর দশেক আগেও তিনি বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। তার বাবাও দিনমজুরী করতেন। একপর্যায়ে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন নুর আলী। এভাবে চলতে চলতে ২০০৮ সালে ‘বোঁথড় ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি এনজিও চালু করেন। কিস্তির মাধ্যমে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি ও ঋণদান কার্যক্রম শুরু করেন।

এরপরই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পান নুর আলী ও তার স্ত্রী। কয়েক বছরেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে নুর আলীর জীবন-জীবিকা। এর মধ্যে ২০১০ সালে একতলা আধাপাকা টিনশেড ঘরের জায়গায় কোটি টাকা খরচ করে তিনতলা আলিশান বাড়ির কাজ শুরু করেন নুর আলী। ব্যাংকেও জমাতে থাকেন টাকা। এর মধ্যে নিজ এলাকায় কিছু জায়গাও কেনেন যার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

উপজেলার তাহমিনা খাতুন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তাদের (নুর ও তার স্ত্রী) প্রলোভনে প্রথমে আমি এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত তারা আমাকে ঠিকমতো মুনাফা দিয়েছেন। পরবর্তীতে বার্ষিক শতকরা ১২ টাকা লভ্যাংশের শর্তে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ২৮ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট প্রকল্প (এফডিআর) এ জমা রাখি। এই ফিক্সড ডিপোজিটের টাকার উপর কয়েক মাসের লভ্যাংশ দেবার পর গত প্রায় ২২ মাস যাবৎ লভ্যাংশ দিচ্ছেন না নুর আলী ও তার স্ত্রী লাইলী খাতুন। আসল টাকা চাইলে সেটাও ফেরত দিচ্ছেন না।

উপজেলার বোঁথড় গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী খোকনের স্ত্রী মিনা রানী বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নুর আলীর এনজিওতে মাঠকর্মীর চাকরি করতেন তিনি। চাকরিকালীন জামানত হিসেবে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে প্রতিমাসে তার বেতন থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা কেটে রাখতেন। পরে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু আজও সেই জামানতের টাকা ফেরত দেননি তারা।

বোঁথড় গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমরা দেখেছি সে (নুর আলী) রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। খুব দুর্দিন গেছে একসময়। খেয়ে না খেয়ে দিন গেছে তাদের। আমি বিদেশ চলে যাই। ঘুরে এসে দেখি ওর ওখানে তিনতলা বিশাল বাড়ি। পরপর দুইটা জমিও কিনেছে। এনজিও ব্যবসার আড়ালে মাত্র দশ বছরে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। দুদক খতিয়ে দেখলে সব বেরিয়ে আসবে।

ইউনুস আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে সে আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। বাড়ির মূল্যই এক কোটি টাকার উপরে। আমার এক আত্মীয় সেখানে আজীবন সদস্য হয়ে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। সে টাকাও ফেরত দিচ্ছে না, লভ্যাংশও দিচ্ছে না। তার এই প্রতারণার বিচার হওয়া দরকার।

অভিযুক্ত নুর আলী বলেন, আমাদের সমিতির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। আমরা খুব সমস্যায় পড়ে গেছি। ঋণ নিয়ে অনেক মানুষ টাকা দিচ্ছে না। অনেকে পালিয়ে গেছে। তাহমিনা টাকা পাবে এটা সঠিক। কত টাকা খরচ হয়েছে বাড়ি করতে জানতে চাইলে নুর আলী বলেন, সেটা হিসেব করি নাই।

চাটমোহর উপজেলা সমবায় অফিসার মুর্শিদা খাতুন বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি জেলা অফিসে অবগত করেছি। এ বিষয়ে জেলা থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমাদের অবগত করবে। তদন্তের পর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। আমরা সমবায় অধিদপ্তরকে সংযুক্ত করে বিষয়টির তদন্ত ও পর্যালোচনা করবো। তারপর অভিযোগের প্রমাণ পেলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আফরোজা

×