ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কোরআনে হাফেজ রুহুল আমিন প্রায় দুই যুগ ধরে শিকলবন্দি

মোঃ নুর আলম, রূপগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২০ জুলাই ২০২৫

কোরআনে হাফেজ রুহুল আমিন প্রায় দুই যুগ ধরে শিকলবন্দি

১৫ বছর ধরে শিকলে বন্দি জীবন যাপন করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একসময়ের মেধাবী ছাত্র কোরআনে হাফেজ রুহুল আমিন। ২০১০ সালের দাখিল পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই দিন পরই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুহুল। সেই থেকেই চলছে তার শিকলে বন্দি জীবন। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ গ্রেড পেয়েছিল।

স্থানীয় মাঝিনা মৌজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় কোরআন মাজিদ মুখস্থ করে হাফেজ হন রুহুল। ২০০৬ সালে জেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আজানে ৩য় স্থান অর্জন করে। দাখিল পরীক্ষার শেষ দিকে কিছুটা অসুস্থতা অনুভব করলেও পরিবারের পরিকল্পনা ছিল পরীক্ষা শেষেই ডাক্তার দেখানোর। কিন্তু পরীক্ষা শেষের মাত্র দুই দিন পর হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুহুল আমিন।

জীবনের ৩০টি বসন্ত পার হলেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি তিনি। এলাকার মানুষের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন, অনেক সময় নানাভাবে স্থানীয়দের বিড়ম্বনায় ফেলেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যদের অপ্রতুলতায় তার উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উপায় না দেখে পরিবার তাকে একটি ঘরের ভেতরে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

রুহুল আমিন রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর দারকাবরটেক এলাকার হতদরিদ্র ইদ্রিস আলীর ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে সে সবচেয়ে ছোট। বড় ভাই সিএনজি চালক, মেজো ভাই রং মিস্ত্রি এবং সেজো ভাই স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করেন। বাবা অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারেন না—অভাব অনটনে জর্জরিত পরিবার।

তার পরিবার বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করলেও আর্থিক সংকটে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেনি। ২০১৮ সালে এলাকাবাসীর সহায়তায় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। ২০২১ সাল পর্যন্ত কয়েক দফা তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং দুই মাস ভর্তি রেখেও কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু আর্থিক সংকটে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এখন মাঝেমধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলে ঘরের সামনে বসে সময় কাটান, আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন, কোরআনের আয়াত শোনান। কিন্তু আবার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে পায়ে শিকল বেঁধে ঘরে আটকে রাখা হয়।

রুহুলের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, “আমার রুহুল আমিন বড় মেধাবী ছিল। অর্থের অভাবে আমার কোরআনে হাফেজ পোলাডারে চিকিৎসা করাইতে পারতাছি না। যদি টাকার ব্যবস্থা হইত, ভালা চিকিৎসা করাইতে পারলে আমার পোলাডা হয়তো সুস্থ হইয়া যাইত।”

স্থানীয় বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, “শিক্ষা জীবনে ছেলেটা খুব মেধাবী ছিল। কোরআনে হাফেজ হইছে। দাখিল পরীক্ষার সময়েই কিছুটা অসুস্থ হইলেও জিপিএ-৫ পাইছিল। কিন্তু তার পরিবার আর্থিক সংকটে চিকিৎসা করাতে পারতেছে না। উন্নত চিকিৎসা পাইলেই হয়তো ছেলেটা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।”

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, “হাফেজ রুহুল আমিনের পরিবার যদি আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা চায়, তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।”    

সানজানা

আরো পড়ুন  

×