
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
দেশের হাট বাজার, রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে যখন লাগাতার টেলিভিশন, ইউটিউব, ওয়াইফাই সংযোগ ছাড়া চলে না, তখন চায়ের দোকানে পাঠাগার করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নলিন বাজারে চা বিক্রেতা সুজন মিয়া। তার এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনজু আনোয়ারা ময়না।
এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এই পাঠাগারে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সুজনের এই চায়ের দোকানে বই পড়তে আসে স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও প্রসারিত করবেন বলে জানান সুজন।
জানা যায়, ভ‚ঞাপুরে উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর পাড়ে নলিন বাজারের মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ছোট একটি সুজনের চায়ের দোকান। ছায়ানীড় প্রকাশনীর সহযোগিতায় চায়ের দোকানের এক কোণায় শতাধিক বই নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ময়না মুক্ত পাঠাগার’।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই চায়ের দোকানে নেই কোনো টেলিভিশন, ওয়াইফাই লাইন। এখানে মোবাইল আসক্ত থেকে বের হয়ে কবি, সাহিত্যিক ও বইপ্রেমীরাসহ স্থানীয়রা তাদের পছন্দের বই পড়ে সময় ব্যয় করছেন। চা খেতে আসা লোকজন চা খাওয়ার ফাঁকে যার যার পছন্দের লেখকদের বই পড়ছেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ-বিদেশের নানা গুণীজনদের বই রয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রমজান, ব্যবসায়ী রফিকসহ অনেকেই বলেন, ‘চায়ের দোকানে কখনো তারা এমন ব্যতিক্রমী পাঠাগার দেখেনি। ছোট এই চা দোকানি সুজন আগ্রহ নিয়ে তার দোকানে টেলিভিশনের বদলে স্থাপন করেছেন পাঠাগার। যমুনা পাড়ে এখানে যারা আসেন তাদের বেশি ভাগই চায়ের ফাঁকে বিভিন্ন বই নিয়ে পড়তে ব্যস্ত দেখা যায়। বিষয়টি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে এবং তার এমন উদ্যোগ প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।’
চা বিক্রেতা সুজন বলেন, দূরদূরান্ত থেকে তার এ দোকানে অনেক লোকজন আসে। তারা আশপাশের দোকানগুলোতে টেলিভিশন দেখা ও মোবাইল ফোন নিয়ে সময় কাটায়। এসব আসক্ত থেকে মানুষকে দূরে রাখতে তিনি তার দোকানে ময়না মুক্ত পাঠাগারের সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগে পাঠাগার স্থাপন করেছেন। স্কুল-কলেজ চলাসময়ে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবকসহ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা এখন নিয়মিত বই পড়ে সময় কাটায়। এলাকার মানুষও উৎসাহ দিতে তাকে সহযোগিতা করছেন।
মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনজু আনোয়ারা ময়না বলেন- বর্তমান যুগে উঠতি বয়সী বা তরুণ ও যুব সমাজ ব্যাপকহারে মোবাইল আসক্তে পড়েছেন। তারা বেশি ভাগই চায়ের দোকানগুলো আড্ডা দেয়। তাদেরকে বইমুখী করতে চা দোকানি সুজনকে পাঠাগার স্থাপনে পরামর্শ দেই। পরে সে আগ্রহ নিয়ে তার ছোট এই দোকানে ময়না মুক্ত পাঠাগার স্থাপন করে সুজন। তাকে সার্বিক সহায়তা করছি।
মিরাজ খান