ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কলাপাড়ায় বাড়ছে ইলিশের সরবরাহ: দাম কমতে শুরু করলেও সাধারণের ক্রয় সক্ষমতার বাইরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী 

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:১৫, ২০ জুলাই ২০২৫

কলাপাড়ায় বাড়ছে ইলিশের সরবরাহ: দাম কমতে শুরু করলেও সাধারণের ক্রয় সক্ষমতার বাইরে

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দক্ষিণের সর্ববৃহৎ মোকাম মহিপুর- আলীপুরে ইলিশের সরবরাহ অনেকটা বেড়েছে। দামও সাইজ ভেদে মণ প্রতি ১০-২০ হাজার টাকা কমেছে। তবে এখন পর্যন্ত জেলেসহ ট্রলার মালিকদের কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। লম্বা জালের বড় ট্রলারের জেলেরা কিছু ইলিশ শিকার করে ফিরছেন। 

গভীর সমুদ্রে, কিনার থেকে অন্তত ১৫০-১৬০ কিলোমিটার গভীর সাগরবক্ষে কিছু ইলিশের দেখা মিলছে। তাও সর্বোচ্চ একেকটি ট্রলারে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ মিলে গড়ে ১২/১৩ থেকে ২০/২২ মণ মাছ মিলছে। তবে শতকরা ১৫-২৫ শতাংশ ট্রলার এ পর্যন্ত কমবেশি মাছের দেখা পেয়েছেন। ২২-২৩ জন জেলে নিয়ে বড় ট্রলারে গভীর সাগরবক্ষে যাওয়া বাশখালীর কিছু ট্রলার ইলিশ শিকার করে ফিরছে। আলীপুরের মৎস্য আড়ত মালিক মেসার্স খান ফিশের স্বত্তাধিকারী আব্দুর রহিম খান এখবর জনকন্ঠকে নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এও জানান, কিছু ইলশ মিললেও কেউ এখন পর্যন্ত এবারের লোকসান কাটাতে পারেননি।

তিনি জানান, গতকাল শুক্র ও শনিবারের কয়েকটি আড়তে ৫০-৬০ মণ করে আবার সর্বোচ্চ কোন আড়তে ৬০-৭০ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। যা এক কেজির চেয়ে বড় সাইজের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকা মণ দরে। যা আরো এক সপ্তাহ আগে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। একইভাবে ৮০০-৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ হাজার। এভাবে ৬০০-৭০০ গ্রাম সাইজের ৫০-৬০ হাজার, ৪০০-৫০০ গ্রামের সাইজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার এবং এর ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫-২৬ হাজার টাকা মণ দরে। 

মহিপুর-আলীপুরে দেড় শতাধিক মৎস্য আড়তে এভাবে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ টি আড়তে প্রতিদিন কমবেশি ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের আমদানি হচ্ছে। যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে মাত্র এক পঞ্চমাংশ। আহরিত ইলিশের পরিমাণ কম থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামের পাইকাররা এই ইলিশ আগেভাগেই চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন। ফলে স্থানীয় বাজারের পাইকারদের নাগালে থাকছে না ইলিশ। 

কমবেশি কিছুটা নিম্নমানের ইলিশ স্থানীয় বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে তার দামও অনেক বেশি। সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় সক্ষমতার মধ্যে নেই। অবস্থা এমন হয়েছে ইলিশ একজনে কিনলে তা অনেকজনের কৌতুহুলের বিষয়ে পরিণত হয়। যেন অমুল্য সম্পদ কেনা হয়েছে। তবে সাগরে দূযোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গেলে ইলিশের পর্যাপ্ত দেখা মেলবে বলে মতামত আড়তসহ ট্রলার মালিক ও জেলেদের।

মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা জানান, প্রতিদিন ১০-১২ টা আড়তে কমবেশি কিছু ইলিশ আমদানি হচ্ছে। মূলত প্রাণচাঞ্চল্য নেই। শতকরা ৯০ জন ট্রলার মালিক এখনো কোটি কোটি টাকার লোকসানে রয়েছেন। তিনি জানান, শুধু ট্রলার, আড়ত মালিক ও জেলে নয়। মহিপুরে এই মৌসুমে কর্মরত আট শতাধিক বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকরা অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। রোজগার নাই। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন। মালিক সমিতির এই নেতা জেলে ও শ্রমিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, বহু জেলে শ্রমিক এমন দুরাবস্থায় রয়েছেন, যে দাড়ি-চুল কেটে সেলুনের টাকা পর্যন্ত বাকি রাখতে হয়।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, গত ১১ জুন অবরোধ শেষ হওয়ার পরে গত এক মাসে মহিপুর-আলীপুর মোকামে ২৬৫ টন ইলিশের আমদানি হয়েছে। এছাড়া আরও ১৩২ মেট্রিকটন সামুদ্রিক মাছের আমদানি হয়েছে। আরো বাড়বে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের আমদানি। আর তখন থেকে দামও ক্রমশ কমবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
 

নোভা

×