ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তরাঞ্চলের খরায় ভেঙেছিল আশা, বৃষ্টিতে ফিরেছে মাঠে স্বপ্ন

আব্দুন নুর আজাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২০ জুলাই ২০২৫

উত্তরাঞ্চলের খরায় ভেঙেছিল আশা, বৃষ্টিতে ফিরেছে মাঠে স্বপ্ন

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আকাশ ছিল প্রায় নিস্তব্ধ। মেঘ থাকলেও বৃষ্টি হতো না, কৃষকের চোখে ছিল শুধু দুশ্চিন্তার ছায়া। গরমে জমি ফেটে চৌচির, গরু-ছাগল কুঁড়ে ঘরে আটকা পড়ে থাকত। আর হালচাষের সময় পেরিয়ে গেলেও মাঠ ছিল খালি।

কিন্তু প্রকৃতি এবার মনের মতোই সাড়া দিল। চলতি সপ্তাহে কয়েক দফা ভারী বর্ষণে মাঠে জমে থাকা ধুলো উড়ে গিয়ে জায়গা করে দিয়েছে সজীব কাদামাটিকে।

৫ নং দুওসুও ইউনিয়নের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, “জুন মাসটা একদম শুকনা গেল। পানি না থাকায় জমিতে হাল পর্যন্ত দিতে পারিনি। এই কয়দিনের বৃষ্টিতে জমি নরম হয়েছে, এখন আমন ধানের চারা রোপণ করছি। যদি আরও কয়েকদিন বৃষ্টি থাকে তাহলে ফসল ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।”

আজিজুরের মতো অনেক কৃষকই জমি তৈরিতে নেমে পড়েছেন। কেউ চারা তুলছেন, কেউবা ট্রাক্টর চালিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। খামারবাড়ির তথ্যমতে, এ বছর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধান আবাদ হবে বলে প্রত্যাশা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, "খরার কারণে কিছু জমিতে চাষ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে এখন যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তা চাষাবাদের জন্য উপযোগী। আমরা কৃষকদের দ্রুত চারা রোপণ ও জলাবদ্ধ জমিতে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিচ্ছি।"

তিনি আরও জানান, আমনের পাশাপাশি কিছু এলাকায় সবজি ও মুগ ডালের চাষও শুরু হয়েছে।

কৃষির সঙ্গে জড়িত না হলেও গ্রামের জীবনধারা বৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে। আগে দুপুর গড়াতেই মাটির পথ গরম হয়ে ওঠত, মাঠে কাউকে দেখা যেত না। এখন বৃষ্টির ধোঁয়া কুয়াশার মতো ছড়িয়ে পড়ে মাঠে, শিশুরা কাদার মধ্যে খেলছে, নারীরা উঠানে চারা সাজাচ্ছেন।

গৃহিণী জয়নব খাতুন বললেন, "আমার স্বামী এখন আবার সকালে মাঠে যাচ্ছে। আমাদের রান্না ঘরেও কাঁচা ধানের গন্ধ ফিরেছে।"

তবে শুধুই আশার ছবি নয়। কয়েকটি নিচু এলাকায় অতিরিক্ত পানির কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে, হঠাৎ ঠাণ্ডা ও গরমের পালাবদলে ধানের পাতায় ব্লাস্ট রোগের মতো কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উত্তরাঞ্চলের এই বর্ষা শুধু পানি নয়, যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বালিয়াডাঙ্গীর কৃষকের জীবনে। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর আজিজুর রহমানের মতো হাজারো কৃষক যখন আবারও মাঠে নামেন, তখন সেটা শুধু চাষ নয়—এটা এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ও টিকে থাকার গল্প।

নোভা

×