
ছবি: জনকণ্ঠ
শেরপুরের গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণ ঠেকাতে প্রায় ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সৌরচালিত বৈদ্যুতিক বেড়া (সোলার ফেন্সিং) এখন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নির্মাণের মাত্র চার মাসের মাথায় এ প্রকল্পে দেখা দেয় ব্যাটারি বিকল, তারে শর্টসার্কিট, গুল্মলতা জড়িয়ে বিদ্যুৎ চলাচলে বাধাসহ নানা ত্রুটি।
স্থানীয়রা বলছেন, যে আশায় এ বেড়া নির্মাণ হয়েছিল, তা ভেঙে পড়েছে দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি আর অবহেলায়। বন বিভাগের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকবল ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকাই প্রকল্প ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘নিউ ন্যাশন সোলার লিমিটেড’ বলছে, ব্যাটারির ত্রুটি নয়, গুল্মলতা তারে জড়িয়ে শর্টসার্কিট হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ফরেস্টার মামুন অর রশীদ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী সীমান্তজুড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় স্থাপন করা হয়। এর আগেই বুয়েটের একটি প্রতিনিধি দল বৈদ্যুতিক বেড়ার কার্যকারিতা ও কাঠামো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে প্রকল্পটি দায়সারাভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং নগদ লেনদেনের বিনিময়ে নিম্নমানের কাজ বুঝে নেওয়া হয়। ফলে প্রকল্প উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই তা অকেজো হয়ে পড়ে।
বন বিভাগ ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান না থাকা, নিয়মিত তদারকির অভাব, গুল্ম-লতা পরিষ্কার না করা ইত্যাদি কারণে বিদ্যুৎচালিত বেড়ার কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তাঁরা মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে বন্যহাতি তাড়িয়ে আসছেন। বেড়া নির্মাণের প্রথম দিকে কিছুটা সুফল মিললেও, চার মাস না যেতেই তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তা প্রায় ৫-৭ বছর ধরে পুরোপুরি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিমল কোঁচ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটি টাকার প্রকল্প মাত্র ৪ মাসেই অকেজো হয়ে যায়! তদন্ত হোক বন বিভাগ ও ঠিকাদার ছাড়া অন্য কোনো নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে। তাহলেই বেরিয়ে আসবে আসল সত্য।
এদিকে পাহাড়ের মানুষ এখনও বন্য হাতির আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন, ফসল নষ্ট, ঘরবাড়ি ধ্বংস আর জীবনের ঝুঁকি আজও তাঁদের নিত্যসঙ্গী। প্রকল্পের সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনও স্বীকার করেছেন, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে।
শহীদ