
ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ডিলার নিয়োগকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মমিনুর রশিদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত, ফলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমাজ ও সচেতন মহল।
ডিলার নিয়োগে শর্ত উপেক্ষা, গুদামের মান নিয়ে প্রশ্ন
২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পলাশবাড়ী উপজেলার আটটি ইউনিয়নের জন্য ২১ জন ডিলার নিয়োগে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। মোট ১২টি শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল—প্রত্যেক আবেদনকারীর কমপক্ষে ১৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সক্ষমতা এবং একটি পাকা গুদামঘর থাকা বাধ্যতামূলক। তবে অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ আবেদনকারীর গুদাম এই মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলেও তাদের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সর্বমোট ৮৮টি আবেদন জমা পড়লেও নিয়ম অনুযায়ী যেসব বিক্রয় কেন্দ্রে একাধিক আবেদন পড়েছে, সেখানে লটারির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের বিধান থাকা সত্ত্বেও তা মানা হয়নি।
নিয়োগের তালিকা রাতে তৈরি, কমিটির মতামত উপেক্ষিত
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাদ্য নিয়ন্ত্রক মমিনুর রশিদ সিদ্দিকী রাতারাতি ‘পছন্দের তালিকা’ তৈরি করে ৯ জুলাই তাতে স্বাক্ষর করেন এবং ১৩ জুলাই তা প্রকাশ করেন। তালিকা তৈরির সময় কমিটির সভাপতি ও অন্য সদস্যদের মতামত গ্রহণ না করে একক সিদ্ধান্তে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এতে করে একাধিক ভুয়া নাম, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন এমনকি অযোগ্য প্রার্থীরাও তালিকাভুক্ত হন, যা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
লটারি স্থগিত, কর্মকর্তা নিখোঁজ
তালিকা প্রকাশের পর বঞ্চিত আবেদনকারীরা উপজেলা খাদ্য অফিস ঘেরাও করে লটারি ও স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ১৪ জুলাই সকালে লটারি আয়োজনের একটি নোটিশ প্রস্তুত করা হলেও সেটিতে স্বাক্ষর না করে ‘অজ্ঞাত কারণে’ অফিস ত্যাগ করেন মমিনুর রশিদ। পরে জানা যায়, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় আরও ৮ জনকে তালিকায় যুক্ত করার গোপন পরিকল্পনার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে আছেন।
কমিটির সদস্যরা জানেন না, নাগরিক সমাজের তীব্র প্রতিক্রিয়া
নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, “মূল সিদ্ধান্ত সভাপতি ও সদস্য সচিবই নেন। অন্যান্য সদস্যদের মতামতের গুরুত্ব তেমন ছিল না।” প্রেসক্লাব সভাপতি ও কমিটির সদস্য শাহ আলম সরকার জানান, “আমাকে কমিটিতে রাখা হলেও কোনো কিছু জানানো হয়নি। পুরো প্রক্রিয়া আমার অজানা।”
এ নিয়ে পলাশবাড়ী নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম লিয়াকত বলেন, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি একটি জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ। এখানে কোনো ধরনের গোপনীয়তা বা স্বজনপ্রীতির সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি গঠন করে লটারির মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে।”
প্রশাসনের অবস্থান ও পরবর্তী উদ্যোগ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন, “৮৮টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২২টি বৈধ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শুনেছি ২১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তবে প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তা মমিনুর রশিদ সিদ্দিকী প্রথমে ২১ জনের নিয়োগের কথা স্বীকার করলেও পরবর্তীতে ‘সমঝোতার ভিত্তিতে’ আরও ৮ জনের তালিকা তৈরি হওয়ার কথা জানান, যা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বলে দাবি করেন।
লিখিত অভিযোগ ও তদন্তের দাবি
জনস্বার্থে ১৭ জুলাই ২০২৫, পলাশবাড়ী উপজেলা নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে সদস্য সচিব ও সাংবাদিক মো. ফেরদাউস মিয়া খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
সচেতন মহল দ্রুত এ অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লটারির মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পুনরায় ডিলার নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে তারা।
আসিফ