ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

নান্দাইলের ঐতিহ্য

হাছু মিয়ার চ্যাপা শুঁটকি দেশ-বিদেশে কদর

মজিবুর রহমান ফয়সাল

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২০ জুলাই ২০২৫

হাছু মিয়ার চ্যাপা শুঁটকি দেশ-বিদেশে কদর

নান্দাইল পৌর বাজারে হাছু মিয়া (সাদা দাড়ি) চ্যাপা শুঁটকি বিক্রি করছেন

চ্যাপা বা সিদল দেখলে বা এর কথা শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। অথচ বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষের কাছে চ্যাপা মানে জিবে জল আসা একটি খাবারের উপকরণ। হাটে আসা মানুষে বাজারের তালিকায় চ্যাপা থাকবে এটা নিশ্চিত। চ্যাপার ভর্তা বা অন্য কোনো তরকারি যেখানেই রান্না হোক না কেন এর ঘ্রাণ আশপাশের মানুষের ক্ষুধা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার চ্যাপার প্রশংসা ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশেও। মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাই এর বড় ক্রেতা। নান্দাইলের বাহিরের কেউ বেড়াতে এলে হাছুর চ্যাপা কিনে নিতে ভোলেন না।  
নান্দাইল পৌর বাজারের ইছাক মার্কেটে ঢুকতেই একটি জায়গা চোখে পড়বে অনেক লোকের ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে বড় একটি খাঁচার ওপর ডালা বসিয়ে ষাটোর্ধ্ব হাছু মিয়া বিক্রি করছেন চ্যাপা। সপ্তাহে শনি ও বুধবার তিনি বাজারে বসেন। এ সময় চারজন সহযোগী ক্রেতাদের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই অবস্থা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। একদিনে বিক্রি হয় প্রায় লাখ টাকা। ক্রেতারা বলেন, ভালো সিঁদল মানেই হাছু মিয়ার চ্যাপা। হাটে আসা মানুষের বাজারের তালিকায় প্রথম পছন্দ এই হাছুর চ্যাপা থাকবেই।

ভালো মানের প্রতি কেজি চ্যাপা এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলার সাভার গ্রামের বাসিন্দা হাছুু মিয়া চ্যাপা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে এলাকায় প্রচুর সুনাম ও অর্থ কামিয়েছেন। তার চ্যাপার প্রশংসা ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশেও। নান্দাইলসহ আশপাশের উপজেলার লোকজন বিদেশে গেলে সঙ্গে চ্যাপা নিতে ভোলেন না। মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে হাছুর চ্যাপার চাহিদা অনেক।
এই বিষয়ে হাছু মিয়া বলেন, বাজারে অনেক মানের চ্যাপা বিক্রি হচ্ছে। মাছে লবণ দেওয়া থাকলে ওজনে অনেক বাড়ে; কিন্তু আসল স্বাদ পাওয়া যাবে না। এভাবে হয়ত ব্যবসা চালানো যাবে; কিন্তু লোকজন প্রতারিত হবে। প্রতিদিনই আমার চ্যাপা বিদেশগামী লোকজন সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাই আমার চ্যাপার বড় ক্রেতা। আপনার চ্যাপার এত সুনাম কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই পেশার প্রতি সততা থাকতে হবে।

মানুষকে যা খাওয়াবেন তার মান ভালো থাকতে হবে। মান নিয়ে আমার কোনো আপোস নেই। সুনামের কারণে আমার দোকানে খারাপ চ্যাপা রাখলেও তা বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু বাড়িতে নিলে পাকা রাঁধুনির হাতে ভালো-মন্দ ধরা পড়বেই।
চ্যাপা তৈরির ব্যাপারে হাছু মিয়া বলেন, প্রথমে পুঁটি মাছ জোগাড় করতে হয়। পরে ভালোভাবে কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে নিতে হয়। ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রয়োজন মতো রোদে শুকাতে হবে। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির তৈরি মটকার ভেতর পুঁটির তেল খাইয়ে শুষ্কতা প্রতিরোধ করে নিতে হয়। মটকার পরতে পরতে পুঁটি সাজাতে হয়। মটকার মুখ পুঁটি মাছের তেলসমৃদ্ধ গুঁড়া দিয়ে আটকাতে হয়। পরে মুখের উপরিভাগ পলিথিন দিয়ে বন্ধ করে মাটি দিয়ে লেপে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাটির গর্তে রাখা হয়। এভাবেই চ্যাপা তৈরি করে বিক্রি উপযোগী করা হয়।

প্যানেল হু

×