
কক্সবাজারে এনসিপির পথসভা মঞ্চ ভাঙচুর, সমাবেশ পণ্ড
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের অভিযোগে শনিবার চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভা মঞ্চ ভেঙে দিয়েছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভের মুখে কক্সবাজার ঈদগাহ ও চকরিয়া উপজেলায় সমাবেশ করতে পারেনি এনসিপি। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই উপজেলায় সমাবেশ স্থগিত করে এনসিপি নেতা-কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
চকরিয়ায় পথ সমাবেশ করার জন্য একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া সেই স্থানের আশপাশের রাস্তায় ডিভাইডার ভাঙচুর করতে দেখা গেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, শনিবার দুপুরে কক্সবাজার শহরে এক সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এটি বিএনপির নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। এই বক্তব্যের পর চকরিয়াসহ কক্সবাজার জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেন। বিকেল চারটা থেকে চকরিয়া মহাসড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিল শুরু হয়। তাঁরা সালাহউদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারের সমাবেশে বলেন, ‘আগে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গাজমি দখল করছে। চাঁদাবাজি করছে। আবার নাকি সে সংস্কার বুঝে না। নাম না বললাম। কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বোঝে না রাজপথে তাঁদের দেখিয়ে দেব ইনশা আল্লাহ।’ এরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, দুপুর থেকে এনসিপির পক্ষে মঞ্চ তৈরি করে মাইকিং করা হচ্ছিল। হঠাৎ বিকেল পৌনে চারটার দিকে কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মঞ্চে হামলা করেন। এনসিপির মাইকিং করা লোকজনকে তাড়িয়ে দেন।
এনসিপির নেতা-কর্মীরা বলেন, শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা চকরিয়া জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে বানানো ট্রাক মঞ্চটি ভেঙে ফেলেন। এ সময় সমাবেশের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ও ট্রাকের কাঁচ ভাঙচুর করেন। তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী সমাবেশস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়।
গাড়ি বহরে থাকা এনসিপি নেতারা জানান, চকরিয়ায় তাদের সমাবেশ ছিল। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন। এ কারণে সেখানে অনুষ্ঠান হয়নি। আমাদের নেতা-কর্মীরা চকরিয়ায় অবস্থান করেননি। আমরা বর্তমানে বান্দরবানের পথে রয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরাও সঙ্গে আছেন।
এর আগে দুপুর ১টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এনসিপির পদযাত্রা শুরু হয়। কর্মীরা পোস্টার, ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা। পদযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর এনসিপির নেতারা পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে যোগ দেন।
কক্সবাজারের মানুষের প্রতি অবিচার হয়েছেÑ নাহিদ ॥ এদিকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে গিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের প্রতি অবিচার করছে এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হবে। বাংলাদেশে নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব আমরা হতে দেব না।
শনিবার দুপুর ২টায় কক্সবাজার শহরে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শেষে পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শহীদ দৌলত ময়দানে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গত সরকার আমলে কক্সবাজার সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল। যেমন নারায়ণগঞ্জে গডফাদার ছিল, তেমনি কক্সবাজারেও গডফাদার ছিল। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান গডফাদার, আর তার অধীনে সারাদেশে ছোট ছোট গডফাদার বিস্তার করেছিল। আমরা সেই গডফাদারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছি। আমরা আর কোনো নতুন গডফাদার তৈরি হতে দেব না। পর্যটন নিয়ে তিনি বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের নামে লুটপাট ও উচ্ছেদ চালিয়েছে। আমরা চাই পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়ে উঠুক যেখানে কক্সবাজারের মানুষের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিত হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে একটি সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে, তারা অধিকারহীন ও রাষ্ট্রহীন। তবে এর সমাধান এটা নয় যে, বছরের পর বছর বাংলাদেশ তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে। রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে গিয়ে কক্সবাজারের মানুষকে অবিচারের শিকার করা ঠিক নয়। তাদের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত না হয় এই বিষয়গুলোর দিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি, ড. ইউনূসের প্রতি এবং বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাই রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধান করুন। তাদের যেন সম্মান ও অধিকারসহ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন।
প্যানেল হু