
দৈনিক জনকণ্ঠ
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা ইউনিয়নের রুপসা গ্রামের কাচারি বাড়ির দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়েছেন এবং অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তার এই সাফল্যে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পেঁপে একটি লাভজনক ফসল এবং এটি চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারীও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি পেঁপে চাষ করে একদিকে যেমন নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন, তেমনি অন্যদেরও উৎসাহিত করছেন।
পেঁপে চাষে সাফল্যের জন্য দেলোয়ার হোসেন মেম্বারকে এলাকার কৃষকরা বিশেষভাবে সম্মান করেন। তার উদাহরণ অনুসরণ করে, অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং এই ফসল থেকে ভালো আয় করছেন।
দেলোয়ার পাটোয়ারী নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ইচ্ছে থাকলেও সংসারে অভাবের কারণে প্রথম জীবনে তিনি পোল্ট্রি ব্যবসা করে লস হওয়ার পরে আবার মাছ চাষ শুরু করেন, তাতও সফলতা না পেয়ে কৃষিজীবন শুরু করলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন পেঁপে চাষ করে।
তিনি ১ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকদের কাছে দেলোয়ার এখন রোল মডেল। পেঁপেচাষি দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী জানান, তিনি গত বছর পেঁপে চাষে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৭ লাখ টাকা বিক্রি করেন।
৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এই অর্থ আয় করে তিনি পেঁপে চাষের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে ব্যাপক পরিসরে পেঁপে বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি ৩ একর জমি লিজ নিয়ে পেঁপে বাগান করেন।
একই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আগে এই এলাকায় কোন কৃষক পেঁপে চাষ করত না, কৃষক দেলোয়ার পেঁপে চাষ করে লাভবান হওয়ায় এই এলাকায় অনেকেই এখন পেঁপে চাষের দিকে ঝুকছেন। কৃষক দেলোয়ারকে অনুকরণ করে আমিও এ বছর পেঁপে চাষ শুরু করেছি। আশা রাখি আমি সফল হব।
এ ব্যাপারে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি স্থানীয় উচ্চ জাত ও রেড লেডি জাতের নিজস্ব উৎপাদন করা পেঁপের চারা দিয়ে বাগান করেছি। তাছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সব সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন।
জমি লিজ, চারা, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ নানা খরচ বাবদ এ পর্যন্ত আমার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু পেঁপে পরিপক্ব হওয়ার আগেই পাইকারের কাছে বাগানের অর্ধেকটা বিক্রি করেছি ১০ লাখ টাকায়। বাকি অর্ধেকটা পেঁপে পরিপক্ব হওয়ার পর বিক্রি করবো আশা রাখি সেখানেও আমি লাভবান হতে পারব।
আমার এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী। তাছাড়া পেঁপে চাষে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। মাকড়শা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে আমি তেমন কোনো সমস্যা পাইনি। পেঁপে চাষে সরকারি সহযোগিতা পেলে। দেশের অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন দেলোয়ার হোসেন।
ফরিদগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল হক রেজা বলেন,দেলোয়ার হোসেন আমারই কৃষক। আমাদের কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ বছরে সাড়ে তিনমাসে গ্রিন ল্যাডি পেঁপে চারা লাগিয়েছিলেন তিনি।
বর্ষার মৌসুমে অন্যান্য সবজি কম থাকায় পেঁপে চাহিদা বেশি থাকে। তিনি বিষয়টি মাথায় রেখে এ পেঁপে চাষ করেছেন।পেঁপে চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে, যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে, সঠিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষ করা হয়।
ইতিমধ্যে দেলোয়ার বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন। পেঁপে চাষে খরচ ও পরিশ্রম উভয় কম তাই লাভ বেশি।
হ্যাপী