ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই অভ্যুত্থান ॥ কান্না থামেনি তিন শহীদ পরিবারে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৯ জুলাই ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থান ॥ কান্না থামেনি তিন শহীদ পরিবারে

ইমরান খলিফা, জামাল সিকদার ও ইলিয়াস খান

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুইজন যুবদল এবং একজন ছাত্রদল কর্মী শহীদ হয়েছেন। ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও ওই তিন শহীদ পরিবারের সদস্যদের কান্না আজও থামেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলা নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খলিফার ছেলে যুবদল কর্মী ইমরান খলিফা গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে গৌরনদীর অন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঢাকার শাহজাদপুর বাজারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরের দিন ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মৃত মহসিন সিকদারের ছেলে যুবদল কর্মী জামাল সিকদার।

এ ছাড়াও ৪ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামের ফারুক খানের ছেলে ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস খান। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চৌরাস্তা এলাকায় কর্মসূচি চলাকালে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। এরপর টানা ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইলিয়াসের মৃত্যু হয়।
জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণে গত ১৬ জুলাই সভার আয়োজনে করে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি। স্মরণ সভায় আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। এ সময় সভাস্থলে উপস্থিত গৌরনদীর তিন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও অঝোড়ে কান্নায় ভেঙে পরেন। ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হলেও স্বজনহারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের আজও কান্না থামেনি।
নিহত যুবদল কর্মী ইমরান খলিফার চাচা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম খলিফা জনকণ্ঠকে বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের পরিবার থেকে আমার ভাতিজা যুবদল কর্মী ইমরান দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। সে শহীদ হলেও তার রক্তের বিনিময়ে গোটা জাতি যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া।
তিনি আরও বলেন, নিহত ইমরানের স্ত্রী আছে, তার একটি অবুঝ শিশু রয়েছে। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারের কাছে একটাই প্রত্যাশা ইমরানকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রী-সন্তানকে সামাজিক সুরক্ষা তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
এক মাত্র সন্তানকে বুকে আঁকরে বেঁচে থাকতে চাই ॥ ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা যুবদল কর্মী জামাল সিকদার (৪০) ঢাকায় রং মিস্ত্রীর কাজ করতেন। তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। নিহতের এক বছর পার হলেও স্বামীর শোকে এখনো কাতর স্ত্রী। 
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদ জামালের স্ত্রী শিউলী আফরোজ বলেন, আমার স্বামী জামাল সিকদার যুবদলের রাজনীতি করত। সে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমার স্বামীকে যেন শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমাদের জীবন থমকে গেছে। স্বামীর আশা ছিল একমাত্র মেয়েকে ঢাকায় ভর্তি করিয়ে লেখাপড়া করাবে। স্বামীর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে মেয়েকে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি করিয়েছি। এখন মেয়েকে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। এ ছাড়াও আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চাই।
শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চাই ॥ ভাইয়ের কথা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদ ইলিয়াস খানের ভাই যুবদল নেতা মহসিন খান বলেন, গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আমার ভাই ইলিয়াস। আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চাই। 
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গৌরনদীর তিনজন যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা নিহতদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। এ ছাড়াও তাদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পাশে রয়েছে।

প্যানেল হু

×