ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মায়ের হাতের আচার থেকে ‘আচারে পাকা’—পুত্র মোবাশ্বিরের সাহসী উদ্যোগ

আফ্রিদি আহাম্মেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১৭:১০, ১৯ জুলাই ২০২৫

মায়ের হাতের আচার থেকে ‘আচারে পাকা’—পুত্র মোবাশ্বিরের সাহসী উদ্যোগ

ছবি: জনকণ্ঠ

মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়া এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তারের হাতের তৈরি গরুর মাংস ও রসুনের আচার এতটাই সুস্বাদু যে, সেই স্বাদের পরিধি বাড়াতে এগিয়ে আসে তারই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া পুত্র মোবাশ্বির আমিন। মায়ের হাতের রান্নার প্রতি ভালোবাসা আর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখার সাহস থেকেই যাত্রা শুরু হয় ‘আচারে পাকা’র।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোবাশ্বির যখন পরিবারের সামনে প্রথম ‘আচার বিক্রির’ কথা তোলে, তখন সবাই অবাক হলেও পরে সমর্থন জানান। এরপরই পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যায় পুরো পরিবার।

মোবাশ্বিরের বাবা মো. আল-আমিন একজন মার্কেটিং কর্মী। আর মা সুমাইয়া আক্তার একজন সৃজনশীল গৃহিণী, যিনি রান্না ঘরেই তৈরি করেন বিশেষ আচার। মায়ের হাতের রান্নার ঘ্রাণ আর স্বাদের প্রতি ভালোবাসাই ছেলে মোবাশ্বিরকে করে তোলে ছোট উদ্যোক্তা।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় উন্নয়ন সংস্থা এসডিআই (সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ)। এসডিআই’র সহযোগিতায় পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক অনুদান ও প্রয়োজনীয় লাইসেন্স। তৈরি হয় একটি কোম্পানি—‘সেই ফুড’, যার ব্যান্ডিং নাম ‘আচারে পাকা’।

শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১ ঘটিকায় মোবাশ্বিরদের বাড়িতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘আচারে পাকা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন এসডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক সামছুল হক। তিনি বলেন,
“মোবাশ্বির আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে—বয়স নয়, স্বপ্নই বড় বিষয়। তার এই সাহসী উদ্যোগ আমাদের নতুন করে আশাবাদী করে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা সরাসরি আচার কিনে নেন। সামছুল হক নিজেও ৫০ পিস গরুর মাংস ও ৫০ পিস রসুনের আচারের অর্ডার করে এবং কিছু আচার কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় ক্লাব, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

বর্তমানে ‘আচারে পাকা’র দুটি পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে—গরুর মাংসের আচার ও রসুনের আচার। উদ্যোক্তারা জানান, উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য রসুনের আচার উপকারী, আর যাদের রক্তচাপ কম, তাদের জন্য গরুর মাংসের আচার হতে পারে সহায়ক।

ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘আচারে পাকা’র প্রচারণা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সুপারশপগুলোতেও পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ চলছে।

এই গল্প শুধু একটি আচার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নয়—এটি একটি পরিবারের একসাথে স্বপ্ন দেখার গল্প, একটি শিশুর সাহসী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। ‘আচারে পাকা’ এখন শুধু খাবারের নাম নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্বপ্ন, সাহস ও সম্ভাবনার প্রতীক।

আবির

×