ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক সংকট, সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষ

এ রহমান মুকুল, স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১৮ মে ২০২৫

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক সংকট, সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষ

ছবি : জনকণ্ঠ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার মানুষ। মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা।

চিকিৎসক সংকটের কারণে গত চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদগুলোও অনেকাংশে শূন্য রয়েছে।

জানা গেছে, বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩০টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইউনিয়ন থেকে পদায়ন হয়ে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।

এই হাসপাতালে গাইনী, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক-কান-গলা, অ্যানেস্থেসিয়া ও অর্থোপেডিক—এই ১০টি বিভাগে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ থাকলেও বর্তমানে একজনও নেই। যদিও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ পদে একজন চিকিৎসক কাগজে-কলমে নিয়োগপ্রাপ্ত, তবে তিনি কোনোদিন হাসপাতালে যোগ দেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহে কর্মরত।

২০১৭ সাল থেকে তিনজন চিকিৎসক বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একসময় এই হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় পূর্ণ ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ, বদলি ও অবসরে যাওয়ায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে ২টি স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদের বিপরীতে ১ জন, ৭টি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদের বিপরীতে ১ জন এবং ৩৫টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের বিপরীতে মাত্র ২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। আউটসোর্সিংয়ে বর্তমানে কেউ কর্মরত নেই। এমএলএসএস-এর ৪টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন।

চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুল কবীর প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিজেই বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীরা জানান, তিনি গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শয্যা-শয্যা ঘুরে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।

ডা. লুৎফুল কবীর চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। প্রায় ৩ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা দেওয়া খুবই কঠিন। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাবও রয়েছে।

সা/ই

×