ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাড়ছে অপপ্রচার ও বহিস্কারের ঘটনা

বরিশালে বিএনপির ‌‌দলীয় কোন্দল চরমে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০২:২১, ৮ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০২:২২, ৮ নভেম্বর ২০২৪

বরিশালে বিএনপির ‌‌দলীয় কোন্দল চরমে

বিএনপির লগো

জেলার দশটি উপজেলায় বিএনপির দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার ছড়িয়ে সম্মানহানী করছেন বলে বিস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দলের অসংখ্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, ওই অপপ্রচারের জেরধরেই দলের হাইকমান্ড জেলা কিংবা উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্ময় না করেই বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ উঠলেই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের স্বপদ থেকে বহিঃস্কার করে আরো সম্মানহানী করছেন।

এতে করে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভূক্তভোগী বিএনপির অসংখ্য নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই দলের অভ্যন্তরীন বিরোধের জেরধরে মনগড়া অভিযোগের কোন তদন্ত না করেই দীর্ঘদিনের নির্যাতিত সিনিয়র নেতাদের দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করায় ক্রমেই জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সূত্রের দাবি, স্ব স্ব এলাকার কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা দলের হাইকমান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে লবিং করে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সিনিয়র নেতাদের বহিস্কারের খেলায় মেতে উঠেছে।

আর এ সমন্ময়হীনতার কারণেই দলের হাইকমান্ডের সাথে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের দুরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ভবিষ্যতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ দলের অভ্যন্তরীন বিরোধের জেরধরে একপক্ষের ষড়যন্ত্রের অংশহিসেবে বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক ও জেলা উত্তর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে এবার মনগড়া মিথ্যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বদিউজ্জামান মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন এবং বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে দলের মধ্যকার একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন থেকে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে।

অথচ ওই চক্রের এক সদস্য বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গঠিত উপজেলা ত্রাণ কমিটির সদস্য ছিলেন।

বিগত সরকারের সময়ে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার হামলার পর অসংখ্য মামলায় হয়রানীর স্বীকার বদিউজ্জামান মিন্টু আরও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্মার্ট কার্ড বিতরণকে ঘিরে ওই চক্রটি আমাকে ও আমার ছেলে অন্তরকে জড়িয়ে অর্থ আদায়ের মনগড়া তথ্য উল্লেখ করে অপপ্রচার শুরু করেছে।

যাহা সম্পূর্ন মিথ্যে, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমি এ অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।

এরপূর্বে কেন্দ্রের সাথে বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির নেতৃবৃন্দের চরম সমন্বয়হীনতার অভাবে নিজ দলের অভ্যন্তরীন বিরোধে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বহিস্কার করা হয়েছে গৌরনদী পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাকির হোসেন শরীফকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার ও দলীয় ষড়যন্ত্রের অংশহিসেবে গত ২২ অক্টোবর রাতে নাটকীয়ভাবে জাকির হোসেন শরীফকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করেন।

এ বিষয়ে তাকে (জাকির) কারণ দর্শানোর জন্য গত ২৫ অক্টোবর নোটিশ করেন জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ওই নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিলো ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এরমধ্যে তিনি নোটিশের লিখিত জবাবও দিয়েছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অসংখ্যবার হামলার স্বীকার জাকির হোসেন শরীফ অভিযোগ করে বলেন, দলের হাইকমান্ডের সাথে বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সমন্বয়হীনতার অভাবে দলীয় অভ্যন্তরীন বিরোধে স্থানীয় কতিপয় কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতার রোষানলে ২৭ অক্টোবর দলের হাইকমান্ড থেকে আমাকেসহ পৌর বিএনপির সদস্য ফরহাদ শরীফ ও নাজমুল হাসান মিঠুকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

নিজ দলের গ্রুপিংয়ের কারণে নাজেহাল হওয়া বিএনপি নেতা জাকির হোসেন শরীফ দলের হাইকমান্ডের কাছে পুরো ঘটনার তদন্ত করে সঠিক বিচারের দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একইভাবে নানা অপপ্রচারের কারণে জেলার অন্যসব উপজেলাগুলোতেও বিএনপির অভ্যন্তরীন বিরোধের জেরধরে প্রায় প্রতিনিয়ত দলের দুর্দীনের নেতৃবৃন্দদের বহিস্কারের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

ফলে অনেকটা হতাশ হয়ে পরেছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।

তাদের দাবি, অপরাধ করলে যেকোন শাস্তি তারা মেনে নিবেন। অন্যথায় মিথ্যে অপপ্রচারের কারণেই যেন তদন্ত না করে কাউকে দল থেকে বহিস্কার করা না হয়।

এজন্য দলের হাইকমান্ডকে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্ময় করার জন্যও তারা জোর দাবি করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা দলের হাইকমান্ড থেকে দুর্দীনের ত্যাগি ও নির্যাতিত বিএনপির নেতৃবৃন্দের বহিস্কারের বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে ভূক্তভোগিরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
 

শহিদ

×