খোকসাবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরতলার গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্প
আষাঢ়ের ঝুম ঝুম বৃষ্টির পানিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে জলকেলি করছে। পুকুরে সাঁতার কাটছে। পাকা বাড়িতে বারান্দায় বুড়োরা বসে গল্প করছেন। মহিলারা সরঞ্জামাদি নিয়ে বসেছেন খড়ির চুলোয় রান্নার কাজে। এতদিন বৃষ্টি এলেই যারা কাপড়চোপড় নিয়ে দৌড়ে অন্যের ঘরে, বাড়িতে যেত। তারা এখন নিজেদের কাপড়চোপড় এবং বই পুস্তক দিয়ে টিনের ছাউনিরশানবাঁধা পাকাঘর সাজিয়ে তুলেছে। মনের ভেতরে প্রত্যেকের আনন্দের ছোঁয়া। আষাঢ়ের মেঘলা আকাশ আর ঝুম ঝুম বৃষ্টি ওদের পরিবারে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তারা পেয়েছে সারা জীবনের স্থায়ী ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা বাড়ি পেয়ে আশ্রিত প্রতিটি পরিবারের সন্তানরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত। বৃদ্ধরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকসাবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরতলার পাশেই সরকারি জমিতে গড়ে তোলা গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া প্রতিটি ঘরে আনন্দের ছোঁয়া। স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতে রেখে নিশ্চিন্তে আব্দুর রাশেদ ঢাকায় প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করছেন। স্ত্রী রোকেয়া ৫ বছরের মেয়ে এবং ছেলে ও ছেলের বউ নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫২নং বাড়িতে বসবাস করেন। কিশোরী সাবিনার মা জাহেদা খাতুন টিনের চৌচালা ঘরের টানা বারান্দায় বসে কাপড় পরিষ্কার আর মাটির চুলায় রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কোনো দুশ্চিন্তা নেই পরিবার নিয়ে। ঘর পেয়ে তারা খুব খুশি। বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, যাতায়াত সুবিধা সবই আছে। নানা জাতের গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে প্রকল্প এলাকা। শাক সবজি নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরা খায়। কেউ কেউ বিক্রি করে টাকা রোজগার করে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রিত আব্দুর রাশেদ আবেগজড়িত কণ্ঠে জানালেন- প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়েছি। তাদের আর আগের ভাঙাচোরা উথুলি বাড়িতে (অন্যের দয়ায়) থাকতে হয় না; আগে যে বাড়িতে ছিলাম তা ছিল পরাধীন। বিদ্যুৎ ছিল না, যাওয়ার ভালো রাস্তা ছিল না। আর বৃষ্টি হলেই পানি পড়ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের যে ঘর দিয়েছেন, সেই ঘর সুন্দর, বিদ্যুৎ আছে, বৃষ্টি হলেও আর ঘর দিয়ে পানি পড়ে না। এত সুন্দর ঘরে থাকব কোনোদিন ভাবিনি। এটি আমার পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করছি বলেও রাশেদ জানান। খোকসাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের মতো আরও ২০০টি দরিদ্র পরিবার ঘর পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, চা-বিক্রেতা, অটোরিক্সাচালক, প্রতিবন্ধী, নির্মাণ শ্রমিক, যমুনার করালগ্রাসে বাস্তুহারা পরিবার, তারা সবাই ঘর পেয়ে নিজের স্বপ্নকে যেন হাতের মুঠোয় পেয়েছেন।
যমুনার করালগ্রাসে বাস্তুভিটা হারানো মৌলবী আব্দুল আজিজ বলেন, আগে শহরতলির চরমালশাপাড়া কাটাওয়াপদা বাঁধের ঢালে ঝুপড়ি তুলে স্ত্রী,সন্তান মিলে চারজন বসবাস করতাম।
এক ঘরে চারজনের বসবাস, প্রশ্রাব-পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না, বৃষ্টি হলেই কাথা-বালিশ কাপড় জড়িয়ে ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এখন নিজেরই একটা পাকা বাড়ি হয়েছে, এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী তালুকদার বলেন, অসহায় গৃহহীন মানুষ যারা এতদিন স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত, এখন তারা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে। দেশের মানবিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় আশ্রয়হীন মানুষকে নিজের ঠিকানা বাড়ি দিয়েসম্মানীত করেছেন, একইসঙ্গে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের যৌথ নামে জমির মালিকানাসহ সারা জীবনের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন এসেছে।