ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি

মাদারীপুর-৩

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ১১ মে ২০২৩

তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ও মো. জাফরুল হাসান, কালকিনি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ও মো. জাফরুল হাসান, কালকিনি ॥ আওয়ামী লীগের আরেক শক্তিশালী দুর্গের নাম মাদারীপুর-২ (কালকিনি-ডাসার) আসনটি। এ আসনে রেওয়াজ আছে- যিনি পাবেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা, তিনিই জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ী। রাজনীতির পালাবদলের অনেক দুঃসময়েও এই আসনের ভোটাররা আওয়ামী লীগকে কখনো নিরাশ করেনি। 
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও বেশ কিছু সময় বাকি থাকলেও এখন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় বেশ জোরেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা সামাজিক-রাজনৈতিক-পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের ঘর গুছাতে শুরু করেছেন। এদিক থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও বিএনপি ভেতরে ভেতরে নানাভাবেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপিও চাইছে আগামী নির্বাচনে এই আসনে ঘুরে দাঁড়াতে। 
মাদারীপুরের কালকিনি ও নবগঠিত ডাসার উপজেলাসহ সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। মাদারীপুর জেলার তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে মাদারীপুরে তিনটি আসনের মধ্যে এ আসনে বরাবরই নৌকার প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়ে আসছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট নেতা এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। 
আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন বলেই এখানে সংসদ নির্বাচন আসলেই মনোনয়ন নিয়ে চলে দলটিতে তীব্র প্রতিযোগিতা। তাই এ আসনে একবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে পুনরায় মনোনয়ন পান না। তবে সংসদ সদস্য হিসেবে আসনটি থেকে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। কথিত রয়েছে, নৌকা প্রতীকেই ভোটারদের আস্থা এই আসনে। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। এদিকে বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় সভা-সমাবেশ করলেও এখন পর্যন্ত জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারে নামেনি কোন পক্ষই।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৯১ হাজার ২২৬ জন। ভোটারদের কমপক্ষে ৮০ ভাগই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থক। 
এ আসনটিতে বিগত সময়ে চারবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও দলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে টানা চার দফায় নির্বাচিত হয়ে একবার প্রতিমন্ত্রী ও দু’বার পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভোটাররা জানান, চারবারের নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য কালকিনির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষার প্রসারে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। সৈয়দ আবুল হোসেন জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন তাই তাকে পুনরায় এ আসনের এমপি হিসেবে দেখতে চান তার সমর্থক ভোটাররা। 
মাদারীপুর-৩ আসন থেকে সবশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক, প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৭ ভোটের মধ্যে এমপি গোলাপ ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৬১ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আনিসুর রহমান খোকন পেয়েছিলেন মাত্র ৩ হাজার ২৯৬ ভোট। 
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, রাস্তা ও কালভার্টসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ড. গোলাপকে পুনরায় এই আসনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরা। 
এদিকে, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক, বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর পাল্টে যেতে থাকে মাদারীপুর-৩ আসনের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।
সাধারণ ভোটাররা জানান, কালকিনির নির্বাচনী রাজনীতিতে আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রবেশের পর স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে শুরু করে। বিএনপি-জামায়াত জোট এবং পরবর্তী ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দফায় দফায় জেল-জুলুমের পাশাপাশি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় বাহাউদ্দিন নাছিমকে। 
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার সময়ের পাঁচটি বছরে বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুর-৩ আসনের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তার অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করেছেন। সেই ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় তারও একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে কৃষিবিদ আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমার প্রতি এ আসনের সাধারণ জনগণের ভালোবাসা, দোয়া ও সহানুভূতি আছে। তাই যদি আমাকে দল পুনরায় মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি এই এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করব।’
অন্যদিকে, এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক ও কেন্দ্রীয় সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিচুর রহমান তালুকদার খোকনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ দুই নেতা এলাকায় জনসংযোগ ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের দল অংশগ্রহণ করলে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে আমি বিশ^াস করি। কারণ রাজনীতিতে আমি সিনিয়র। 
এদিকে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ খালেক খোকন এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন না হলে আমি জাপার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
অপরদিকে, এই আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আরও কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তাদের কোনো নির্বাচনী কর্মকা- চোখে পড়ে না।

×