ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুর-২

আওয়ামী লীগে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ঘুরে দাঁড়াতে সচেষ্ট বিএনপি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ০০:১০, ১১ মে ২০২৩

আওয়ামী লীগে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ঘুরে দাঁড়াতে সচেষ্ট বিএনপি

মাদারীপুর-১ আসনের মতো মাদারীপুর-২ আসনটিও বরাবরই আওয়ামী  লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচি

মাদারীপুর-১ আসনের মতো মাদারীপুর-২ আসনটিও বরাবরই আওয়ামী  লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। বেশিরভাগ নির্বাচনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে অনেক সময় বাকি থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নিজেদের ঘর গোছাতে শুরু করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যতটা সক্রিয়, ততটাই পেছনে রয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আসনটি রাজৈর উপজেলার ১১টি ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নসহ মোট ২১টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতারা শহর ও শহরতলির পাড়া মহল্লা, এমনকি বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। জনসভা, সেমিনার করে আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে নানা কর্মসূচি করে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকার সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি উল্লেখ করার মতো। বিগত দিনের মতো নির্বাচনের আগে-পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন; তাদের নানা 
সমস্যার সামাধান করেছেন; এখনো ঠিক একইভাবে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। 
আওয়ামী লীগ নেতারা বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। কিন্তু প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এখনো রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়, আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী। তারা তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ করছে। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তেমন একটা মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও তত্তাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। কিন্তু তাদের বক্তব্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত  ছাড়া তারা এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম মাঠে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, বিএনপি নেতা মিল্টন বৈদ্য, জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিদ হাওলাদার। তবে অন্যান্য দলের বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর নাম আপাতত শোনা যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর-২ আসন থেকে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ছয়বার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর সদরে বিজয়ী হন মরহুম মৌলভী আছমত আলী খান (আওয়ামী লীগ)। তার ছেলেই বর্তমান এমপি শাজাহান খান। তিনি পর পর দুইবার মন্ত্রী ছিলেন। তিনি সব সময়ই নিয়মিতভাবে মাদারীপুরে আসেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ সকল ধরনের পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। 
স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে সংসদ সদস্য শাজাহান খানের রয়েছে সুসম্পর্ক। মাদারীপুরের উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তার সমর্থকদের দাবি, এবারও শাজাহান খান আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজ কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। তার প্রচেষ্টায় মাদারীপুরের হবিগঞ্জ সেতু, শ্রীনদী-কবিরাজপুর সেতু, রাজৈর পৌর ভবন, রাজৈর থানা ভবন, মাদারীপুর কাজিরটেক আছমত আলী খান সেতু, মাদারীপুর শিল্পকলা ভবন, মাদারীপুরে আড়াইশ বেড হাসপাতাল, নাসির্ং ইনস্টিটিউট, মেরিটাইন ইনস্টিটিউট, সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন, হর্টিকালচার, ইকোপার্কসহ অসংখ্য ব্রিজ কালভার্ট ও সংযোগ সেতু হয়েছে। এ ছাড়া শাজাহান খানের রয়েছে শ্রমিক সংঠনের অকুণ্ঠ সমর্থন। 
মাদারীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রুবেল খান বলেন, মাদারীপুর জেলাবাসীর পছন্দের মানুষ হচ্ছেন শাজাহান খান। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিতভাবে আসেন এবং গরিব দুখী সবার কথা শোনেন। তাই এই আসনের মানুষ শাজাহান খানকে খুবই পছন্দ করেন এবং ভালোবাসেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছি। জানতে চাওয়া হলে শাজাহান খান এমপি বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব এবং আমার বিশ্বাস মাদারীপুর-২ আসনে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যে সব উন্নয়ন করেছি তা এখন দৃশ্যমান।

তার পরও এখন অনেক উন্নয়ন করার মতো কাজ বাকি আছে। তা ছাড়া শুধু মাদারীপুরে নয়, জাতীয়ভাবেও আমি অনেক কাজ করেছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেছি। গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সময় আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করেছি। 
তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি যে আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, পেট্রোল বোমা মেরে বহু সাধারণ মানুষ ও পরিবহন শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে, বহু পরিবহনসহ জাতীয় সম্পদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জালাও পোড়াও রাজনীতি শুরু করে; তখন আমি দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপির ওইসব ধ্বংসাত্মক খেলা প্রতিহত করেছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশের জেলায় জেলায় ঘুরে ঘরে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা ও সাধারণ শ্রমিকদের সহায়তায় বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতিহত করেছি।

তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার বিজয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠন করবে এবং উন্নয়নের ধারা বজায় রাখবে। সে হিসেবে মাদারীপুরেও উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি। তাই বিগত দিনে আমার কাজ ও বর্তমান সময়ের কাজ বিবেচনা করে আমাকেই মনোয়ন দিবেন বলে আমার বিশ্বাস।
মাদারীপুর-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আরেক ত্যাগী নেতা এই মাদারীপুরের সন্তান কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও একজন সফল কৃষিবিদ। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি বহুবার জেল-জুলুম এবং অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি। 
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। ২০০৭ সালে তত্তাবধায়ক সরকার (ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন)-এর রোষানলে পড়ে গ্রেপ্তার হন এবং সে সময় চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিকটতম আত্মীয় হন বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনিও একজন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী।

জনগণের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বড় একটি অংশ তৃণমূল পর্যায়ে তার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাদারীপুর-২ আসনের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনসভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও আফম বাহাউদ্দিন নাছিম পোড় খাওয়া একজন একনিষ্ঠ নেতা। সারাদেশের ও মাদারীপুরের উন্নয়নে তারও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, মাদারীপুরের জনগণ এমপি পদে পরিবর্তন চায়। তাই এবার আমরা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের জন্য মনোনয়ন চাইব। আশা করছি আমরাই মনোনয়ন পাব এবং বাহাউদ্দিন নাছিম বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী আবার সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হবেন। তখন বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সঙ্গে নিয়ে বরাবরের মতো এলাকার উন্নয়নসহ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন।
জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছি। বঙ্গবন্ধুকনা শেখ হাসিনার পক্ষে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার লক্ষ্যে, গণতন্ত্র আরও সুসংহত করতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আর বিএনপি-জামায়াতের অশুভ কর্মকা-, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, আগুন সন্ত্রাস আর ধ্বংসের রাজনীতি এখন দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ষড়যন্ত্র করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। 
তিনি বলেন, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে আরও গতিশীল করে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আগামী দিনে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা রাজনীতি করছি। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে বিশ^ দরবারে একটা মর্যাদার আসনে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে চাই। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আমরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে দেশ গড়ার লক্ষ্যে, জাতির পিতার বাংলাদেশ, সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এদেশের মানুষের উন্নত জীবনমানের লক্ষে আগামীতেও আমরা কাজ করতে চাই।
মাদারীপুর-২ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, ‘মনোনয়ন তো চাওয়াই যায়, চাইব তো বটেই, অবশ্যই চাইব। না চাইলে দল তো মনোনয়ন দেবে না। অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। এলাকার মানুষ হিসেবে, এই মাটির সন্তান হিসেবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে  রয়েছে আমার নিবিড় সম্পর্ক। এলাকার বয়স্ক সকল মানুষ, দলের নেতাকর্মী, ছাত্র, যুবক, তরুণ, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষসহ আপামর জনগণের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক অটুট রয়েছে। এসব মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে।      
এ ছাড়া মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন ফরাজী। মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ফরাজীর হাট এলাকার মরহুম হাজী আনোয়ার হোসেন ফরাজীর ছেলে সাহাবুদ্দিন ফরাজী। সাহাবুদ্দিন ফরাজীর পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ’৭১ এ মাদারীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। তার বড় ভাই সিরাজ ফরাজী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যোদ্ধা। রাজনৈতিকভাবে তারা সকলেই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর  জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। 
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধ যোদ্ধা সিরাজ ফরাজী বলেন, আমার ভাই সাহাবুদ্দিন ফরাজী মাদারীপুর সাবেক নাজিমদ্দিন কলেজে (বর্তমান মাদারীপুর সরকারি কলেজ) অধ্যায়নকালে ছাত্রলীগের লড়াকু কর্মী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এক বছর জেল খেটেছেন। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট  গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তার জন্য মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া হবে। 
মাদারীপুর-২ আসনে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিয়ে বিএনপির তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে তারা তাদের দাবীর পক্ষে এখনো অনড় রয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তা না হলে নির্বাচনে যাবেন না। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন দু’জন। এরা হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান। আরেকজন সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য মিল্টন বৈদ্য।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই মাদারীপুরে প্রথমে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ছাত্রছাত্রী সংসদের জিএস ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এখন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে আছি। দ্বাদশ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, তবেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সে ক্ষেত্রে দল যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আমাকে মনোনয়ন দেয় তা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আশা করছি আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।
এ ব্যাপারে মিল্টন বৈদ্য বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ি। সেই সুবাদে গতবারও নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। তবে নির্বাচনের সবকিছুই নির্ভর করছে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। তা ছাড়া যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। সর্বপরি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।
মাদারীপুর-২ আসনে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিয়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো জেলায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলায় সভা-সেমিনারসহ কিছু কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ছে। জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব লিয়াকত হোসেন খান বলেন, জাতীয় পার্টির নির্বাচনমুখী, এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে আমরা দল গোছাতে শুরু করেছি। ঈদের পরেই জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসকল কমিটি গঠন করা বাদ রয়েছে; সেসব কমিটি গঠন করা হবে। জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিদ হাওলাদার এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত বলে কেন্দ্র থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন।  
মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি মাদারীপুর জেলার আহ্বায়ক মহিদ হাওলাদার বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে এসব সিলেক্ট করে রাখে, আমাদে মনোনীত করেছে। মাদারীপুরে আমাকে এবং শিবচরে মিন্টুকে মনোনীত করেছে। কিন্তু কালকিনিরটা এখনো সিলেক্ট হয়নি। মাদারীপুর-১ ও মাদারীপুর-২ আসন ফাইনাল বলা চলে। তবে মাদারীপুর-৩ এখনো ফাইনাল হয়নি। আমরা তো মাঠে আছি; তৃণমূল পর্যায়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে ভোটারদের কাছে এখনো ভোট চাচ্ছি না। কারণ ভোট চাওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের এখনো হয়নি। আগে আমরা দল গোছানোর চেষ্টা করছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের সংগঠন এখনো করছি। এগুলো শেষ হলেই আমরা বসবো। আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত হয়; পরবর্তীতে আমরা সবই জানাব।

×