ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুর-১

নৌকার লিটন চৌধুরীর বিকল্প নেই, বিএনপি চায় ঘুরে দাঁড়াতে

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৯ মে ২০২৩

নৌকার লিটন চৌধুরীর বিকল্প নেই, বিএনপি চায় ঘুরে দাঁড়াতে

মাদারীপুর জেলার তিনটি আসন বরাবরই আওয়ামী  লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত

মাদারীপুর জেলার তিনটি আসন বরাবরই আওয়ামী  লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। চরম বৈরী অবস্থাতেও এই তিনটি আসনে আওয়ামী লীগকে বিমুখ করেননি এলাকার ভোটাররা। মাদারীপুর-১ (শিবচর) সংসদীয় আসনটিও আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের একক অবস্থান এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। 
আসনটি শিবচর উপজেলার ১৯ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এখনো অনেক বাকি। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের ঘর গোছাতে চেষ্টা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের এই ভোট ব্যাংকে বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম (লিটন) চৌধুরীর কোনো বিকল্প নেই। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর (দাদা ভাই) বড় ছেলে। নূর-ই আলম চৌধুরী মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত এমপি। তিনি তাঁর কর্মকা-ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। 
শিবচর পৌরসভা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের পরিসংখ্যানে এটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরীর মনোনয়ন শতভাগ নিশ্চিত। যে কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তিনিই এই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। মাদারীপুর-১ আসনের শিবচর উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তাঁর গভীর সম্পর্ক। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে এমনটাই জানা গেছে। 
বিগত দিন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নূর-ই-আলম চৌধুরী শিবচর উপজেলা শহর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যে উন্নয়ন করেছেন তা শুধু শিবচরই নয়, মাদারীপুর জেলাসহ বাংলাদেশের মধ্যে অনুকরণীয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই আসনে অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা চলমান রয়েছে। নূর-ই আলম চৌধুরী এলাকাবাসীর সঙ্গে যে যোগাযোগ তাতে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকল্প কোনো প্রার্থী ভাবতেই পারছে না। 
শিবচর উপজেলা মাদারীপুর জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় অন্যতম। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় শিবচর অংশে উন্নত দেশের আদলে নির্মিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসহাইওয়ে, নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক, ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজসহ একাধিক প্রকল্প। বাস্তবায়ন করা হয়েছে জনকল্যাণমুখী বহু প্রকল্প। অন্যদিকে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু ও জেলার শিবচর হয়ে পুরো দক্ষিণাঞ্চল রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় এনে কাজ চলছে। ছোট-বড় বেশকিছু ব্রিজ, শতাধিক কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুগম করা হয়েছে।

শিবচরে বিল পদ্মার ওপর শেখপুর সেতু, শিবচরে সম্ভুক সেতু উল্লেখযোগ্য। দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনা গৃহায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ জেলায় শত শত ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে নূর-ই আলম চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকায় শিবচরে এখন বহুমাত্রিক উন্নয়নের মহোৎসব চলছে।
শিবচর উপজেলা যে কোনো জেলা শহরের চেয়ে উন্নত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি। তিনি তাঁর মনের মতো করে গড়ে তুলেছেন আধুনিক অডিটোরিয়াম, লালনমঞ্চ, মুক্তমঞ্চ, অসংখ্য ম্যুরাল ভাস্কর্য, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদা ভাই উপশহর, চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটরিয়াম ও প্রবাহমান ‘৭১ ভাস্কর্য, রবীন্দ্র সরোবর, সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গমাতার ম্যুরাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভবন, ‘৭১ সড়ক, শেখ হাসিনা সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ভাস্কর্য মুক্তবাংলা, গুয়াতলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি। বাস্তবায়ন করেছেন ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, আধুনিক থানা ভবন, মার্কেট করা হয়েছে আধুনিকায়ন, আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ করে উপজেলা সদর থেকে গ্রামীণ জনপদকে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। 
ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, প্রতি ইউনিয়নে রয়েছে ই-সেবা কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টার, উপজেলা মডেল মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা। স্বাস্থ্যসেবায় এনেছেন ব্যাপক উন্নয়ন। সৌন্দর্যবর্ধন করে গড়ে তুলেছেন গোটা শিবচরকে। তাঁর উন্নয়নের কারুকার্য যে কোনো মানুষকে বিমোহিত করবে। মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় শিবচর যেন পদ্মা পাড়ে একটুকরো সোনার বাংলা। বহুমাত্রিক উন্নয়নের কারণে শিবচরকে বাংলাদেশের মডেল উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। এখানকার অনেক স্থাপনা দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় করে গড়ে তুলেছেন মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই আলম চৌধুরী। মাদারীপুর জেলাবাসী এখন শিবচরকে নিয়েই গর্ব করেন। 
এছাড়াও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। শিবচরে উল্লেখযোগ্য ব্রিজের মধ্যে লিটন চৌধুরী সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান এবং ইলিয়াস আহমেদ সেতুর নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজ। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার হতে যাচ্ছে শিবচরে। ২০২২ সাল থেকে এই জনপদের মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক সুযোগ সুবিধা পেতে শুরু করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প ইতোমধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। চলমান ও অপেক্ষমাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে শিবচর হবে বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন। 
শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি পূরণ হচ্ছে লাখো মানুষের আবাসন। স্বাস্থ্য খাতেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নতুন নতুন আরও প্রকল্প পাস হচ্ছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে রেল লাইনের কাজ। গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন ৭টি বগি নিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়। আগামী অক্টোবরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন শিবচরসহ পুরো দক্ষিণবঙ্গে বড় ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে। শিবচরে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা নানামুখী শিল্প খাত তৈরির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। যে কারণে জমির দাম বেড়েছে আগের তুলনায় ৫-৭ গুণ বেশি।  
শিবচরের দিকে ফিরে তাকালে সেকাল-একালের মধ্যে আকাশজমিন ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। এক সময়ের দুর্গম চরাঞ্চল ও অনুন্নত জনপদ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। শিক্ষা-সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত ব্যবস্থায় এসেছে আমুল পরিবর্তন। বেশকিছু মেগা প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এগিয়ে চলছে ধারাবাহিকভাবে। এছাড়া বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি যে ভূমিকা রেখেছেন তা শিবচরবাসী আজীবন মনে রাখবেন। 
বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় শিবচরে ও ঢাকার মিরপুর টোলারবাগে।

আর দেশের প্রথম লকডাইন ঘোষণা করা হয় শিবচরে। লকডাউনের সময় মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন, দলীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ডাক্তার-নার্স মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, খাদ্যসামগ্রী, শিশুখাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন। কঠোর লকডাউনের কারণে শিবচরে করোনায় মৃত্যুর হার দ্রুত কমে আসে। করোনায় আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছেন।

শিবচরকে এখন স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমান এমপি নূর-ই আলম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এত সব উন্নয়ন যেখানে দৃশ্যমান; সেই জনপদে তাঁকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিকল্প কারও কথা ভাবতেও পারে না সাধারণ মানুষ ও সমাজ সচেতন মহল। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম সর্বত্রই মানুষের মুখে মুখে। 
মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরীর কারণেই ৩১ বছর ধরে শিবচর নিয়ে ভাবতে হয়নি আওয়ামী লীগকে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা জাতীয় সংসদের চিফ হুইপকে সামনে রেখেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দল সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর (দাদাভাই) হাত ধরেই এ এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের মূল ভিত্তি তৈরি হয়। নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়ে। এক সময় আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি এবং এরপর থেকে বিএনপির অবস্থান হলেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের কাছে বরাবর পরাজিত হয়েছে। 
শিবচরে ইতোপূর্বে জাতীয়ভাবে যে দলই সরকার গঠন করেছে, সব সময় আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, আসনটিতে আওয়ামী লীগের নূর-ই-আলম চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে ভোটাররা অন্য কাউকে ভাবতে পারেন না। শিবচরের উন্নয়নের দিক বিবেচনা করলে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আওয়ামী লীগ থেকে একমাত্র নূর-ই-আলম চৌধুরীই মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, এগুলো এখনো বলতে পারছি না, নির্বাচনের অনেক দেরি, এখন কি করে বলব কে প্রার্থী? পাঁচ বছরের মধ্যে এখনো এক বছর বাকি। আপনারা লেখেন; আমরা এত আগে এসব নিয়ে চিন্তাই করছি না। আপনারা সাংবাদিকরা এগুলো খুঁজে খুঁজে লেখেন। নির্বাচন নিয়ে আমাদের এখনো কোনো চিন্তা নেই। আরও অনেক পরে।
শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম বলেন, একসময় শিবচরে সরকারি কর্মকর্তারা কেউ আসতে চাইতেন না। রাস্তাঘাট ছিল না। এখন শিবচরে এলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মকা- নেই বললেই চলে। তাই এসব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে প্রচার করা হলেও জনগণের মধ্যে কোন সাড়া নেই। তবে অস্তিত্বের স্বার্থে মাঝে মধ্যে তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন নানা কৌশলে। বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী। তাই তারা তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর চেষ্টা করছে। বিএনপি এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অটল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও তত্তাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। 
তবে এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাবেক সম্পাদক সাংবাদিক মরহুম মোতাহার হোসেন সিদ্দিকীর ছেলে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ, ঢাকা গোপীবাগের সাবেক কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী। বিগত দিনের সাংগঠনিক কর্মকান্ড যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী বিএনপির নেতাকর্মীরা। 
শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার সহধর্মিণী নাদিরা মিঠু চৌধুরী এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। বিএনপি এখনো নির্বাচন নিয়ে তেমন তৎপর না হলেও আলোচনায় আছেন আরও কয়েক নেতা। দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু ও আবু জাফর চৌধুরী। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন মো. জহিরুল ইসলাম মিন্টু। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া আপাতত মাঠে দেখা যাচ্ছে না অন্য কোনো দলের সম্ভাব্য প্রার্থীকে। 
তবে শিবচর উপজেলা বিএনপিতে মতপার্থক্য বিদ্যমান। কয়েক নেতা নিজস্ব মতানুযায়ী দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। মতপার্থক্য থাকার কারণে উপজেলা পর্যায়ে দলটি সুসংগঠিত হতে পারছে না। সম্প্রতি জাতীয় সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা হতে চেষ্টা করছে শিবচর উপজেলা বিএনপি। তবে দীর্ঘ ৬ বছরেও উপজেলা বিএনপির কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে দলীয় নানা কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছেন নেতারা। উপজেলায় দলের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে এসে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা একাধিক বিএনপি নেতার। 
শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, ‘আমি তো দলের মনোনয়ন চাইব। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব।’ শিবচর উপজেলা বিএনপির আরেক নেতা আবু জাফর চৌধুরীও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তিনিও বিএনপির একজন পরীক্ষিত নেতা।
জানতে চাইলে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু বলেন, উপজেলা বিএনপিসহ সব অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন খুবই জরুরি। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর সহধর্মিণী নাদিরা মিঠু চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছয় বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। তবে উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। তৃণমূলেও কোনো কমিটি নেই। কমিটি গঠন হলে সবাই একত্র হয়ে কাজ করা যেত। আগামীতে দল যদি নির্বাচনে আসে; সেক্ষেত্রে আমি মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব।’
এদিকে মাদারীপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মাদারীপুর জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম মিন্টু। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানান। জহিরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সবকিছু দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
জাতীয় পার্টি, মাদারীপুর জেলার আহ্বায়ক মহিদ হাওলাদার বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে এসব সিলেক্ট করে রাখে, আমাদেরটাও সিলেক্ট করেছে। মাদারীপুরে আমাকে এবং শিবচরে জহিরুল ইসলাম মিন্টুকে সিলেক্ট করেছে। মাদারীপুর-১ ও মাদারীপুর-২ আসন ফাইনাল বলা চলে। তবে মাদারীপুর-৩ এখনো ফাইনাল হয়নি। আমরা তো মাঠে আছি; তৃণমূল পর্যায়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে ভোটারদের কাছে এখনো ভোট চাচ্ছি না। কারণ ভোট চাওয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের এখনো হয়নি। আগে আমরা দল গোছানোর চেষ্টা করছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের সংগঠন এখনো করছি। এগুলো শেষ হলেই আমরা বসব। আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত  হয়; পরবর্তীতে আমরা সবই জানাব।

×