ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ বাকেরগঞ্জ পৌরবাসী, ডেঙ্গুর অশনি সংকেত

সংবাদদাতা,বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ বাকেরগঞ্জ পৌরবাসী, ডেঙ্গুর অশনি সংকেত

বর্জ্যে বৃষ্টির পানি জমে মশার বংশবিস্তার 

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দারা। মশা নিধনের কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে মশার উৎপাত। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন পৌরবাসী। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসির জীবন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্বেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌরবাসী। বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার উপদ্রবে রক্ষা পাচ্ছেন না কেউই। কয়েল, স্প্রে সবকিছুই যেন মশার উপদ্রবের কাছে হার মানছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও যেন রেহাই নেই। মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগে দিন দিন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বসবাস করছে পৌরবাসী। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, ড্রেনের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও আবাসিক এলাকাগুলোতে আবর্জনার স্তূপ ফেলে পাহার তৈরি করে রেখেছে। ঐ সব বর্জ্যে বৃষ্টির পানি জমে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌর এলাকায় ডেঙ্গু ও মশানিধনে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি বাকেরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর এলাকার চৌমাথা ব্যবসায়িরা বলেন, মশানিধনে কোন ধরনের কার্যক্রম নেই বাকেরগঞ্জে। পার্শ্ববর্তী উপজেলার পৌর শহর গুলোতে মশানিধনে পৌর কর্তৃপক্ষ সচেতনতামূলক পোস্টার বিতরণ ও ব্যানার তৈরি করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়াও মশানিধনে ফগার মেশিনের জ্বালানি ও হ্যান্ড স্প্রের কীটনাশক ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু বাকেরগঞ্জ পৌরসভার চিত্র ভিন্ন রুপ।

সুত্র মতে, প্রতিটি পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিডিউল অনুযায়ী মশানিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। তবে বাকেরগঞ্জ পৌর সভায় একটি ফগার মেশিন রয়েছে তাও অকেজো। 

পৌরবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, ১৯৯০ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু কাগজে-কলমে এটি একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পৌরসভার নালা-নর্দমায় অপরিষ্কার পানি জমে থাকে। এছাড়া ড্রেন পরিষ্কার না করায় এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে সম্প্রতি মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া পৌরসভার মশকনিধন কার্যক্রমের অভাবে মশার বিস্তার চরম আকার ধারণ করেছে।

পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনির বলেন, মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিন-রাত সমানতালে মশা কামড়ায়। কয়েল দিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বাচ্চারা ঠিকমতো পড়াশুনাও করতে পারে না। বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড ব্রীজের দক্ষিণ পাশ আগাবাকের সড়কের প্রবেশ পথে রাস্তার উপর ময়লার স্তূপ বৃষ্টিতে ভিজে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। মশকনিধনে পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

বিভিন্ন ওয়ার্ডের এস এস সি পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। কয়েল দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ঠিকমতো পড়াশুনা করা যায় না। বর্ষা মৌসুমে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা-নর্দমাগুলোতে মশক নিধন স্প্রে না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত মশা নিধনকরী ঔষধ প্রয়োগ করা হলে হয়তো পৌরবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। সদর রোড মহল্লার বাসিন্দা গৃহিনী রাবেয়া খাতুন বলেন, মশার বংশ বিস্তার রোধে ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের ঔষধ ছিটানোর কোন খবর নেই। সম্প্রতি এ শহরে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতো মশা যে কয়েল দিলেও কাজ হয় না। মশার গুণগুণ শব্দে এবং কামড়ে ভীষণ বিরক্ত লাগে। ছেলে মেয়েরা ঠিকমত পড়াশুনাও করতে পারছে না। এখন চারিদিকে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে খোজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ দিনে প্রায় ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা বাসির মাঝে আতংক ছড়িয়ে পরেছে।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক হোসেন জানান, মশানিধনে সরকারি কোনো  বরাদ্দ নেই। তাই মশানিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

এ বিষয় বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর সবুজ নামের এক ব্যক্তি আনসার সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

টিএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×