ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ নগরী

ময়লা ও নোংরা পানিতে অমানবিক দিনযাপন

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ময়লা ও নোংরা পানিতে অমানবিক দিনযাপন

নগরীর বলাশপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ময়লা ও দুগর্ন্ধযুক্ত পানি ভেঙ্গে শিশুরা এভাবে স্কুলে যায়

ময়মনসিংহ নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তিন হাজারের বেশি পরিবার টানা ১৫ দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছে। ঘরে বাইরে হাঁটু সমান ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানিতে এসব পরিবার অমানবিক দিনযাপন করছে। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় লাশ রাখা ও দাফনের কোন জায়গা পর্যন্ত নেই। এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত সাত বছর ধরে নগরীর এই ওয়ার্ডের এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও ময়মনসিংহ সিটি কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

অভিযোগ অপরিকল্পিত সরু পাইপের আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এবং ভাটিতে পানি প্রবাহের পথে বিনা বাধায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেই এই জলাবদ্ধতা। প্রতি বর্ষায় অন্তত তিন মাস পানিবন্দী থাকতে হচ্ছে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। এ সময়ে চর্ম ও পেটেরপীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। অথচ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি এ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান জানান, নগরীর বলাশপুরের মানুষ ১৫-২০ দিন ধরে পানিবন্দী এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে একাংশের পানি ব্রহ্মপুত্রে এবং আরেক  অংশের পানি মাসকান্দার খালে ফেলে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই জলাবদ্ধতা থাকবে না।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বলাশপুর, পালপাড়া, ভাটিকাশর ও কেওয়াটখালীর তিন হাজারের বেশি পরিবার গত ১৫-২০ দিন ধরে ঘরে বাইরে হাঁটু সমান ময়লা ও নোংরা পানিতে বন্দী জীবনযাপন করছেন। বলাশপুরের ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম (৬০) জানান, বাসার ভেতরে পানি। বাসার বাইরে রাস্তায় পানি। এ রকম অবস্থায় পরিবারের সবাই তাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছে।
ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, এলাকার পানি নিষ্কাশনের আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ বন্ধ হওয়ার কারনে পানি বের হতে পারছে না। এর বাইরে পাশের কৃষ্টপুর, চরপাড়া, বাঘমারা এলাকার পানিও এই ওয়ার্ডে ঢুকছে। পানি নিষ্কাশনের পথে মাসকান্দা ও বিসিক শিল্প নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করায় সৃষ্টি হয়েছে এই অচলাবস্থা।

বলাশপুরের গৃহবধূ ঝর্ণা (৩৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কেউ মারা গেলে লাশ রাখার কোন জায়গা নেই। দাফন করতে হচ্ছে দূরের কবরস্থানে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা প্রসূতিকে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হলে ভোগান্তির সীমা থাকছে না। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার নজরুল ইসলাম জানান, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ নারী শিশু ও বয়স্কদের। চর্ম ও পেটের পীড়াসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। পানির কারণে এলাকায় কোন রিক্সা মিলছে না।
সিটি কর্তৃপক্ষের এই ভুলের কারণেই গত পাঁচ সাত বছর ধরে বর্ষা মৌসুমের ৩ মাসের বেশি সময় পানিবন্দী থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অথচ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে চলেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। কবে নাগাদ এই ভোগান্তির অবসান ঘটবে জানা নেই কারও। এ রকম পরিস্থিতিতে আকাশে কালো মেঘ দেখলেই ভাবনায় পড়েন এলাকাবাসী। কারণ একদিন বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতার মেয়াদ বেড়ে যায়। 

সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামীমা আক্তার এলাকার চার-পাঁচ হাজার পরিবারের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ তিনি নিজেও পানিবন্দী থাকেন। প্রকল্পের কাজ চলছে। শেষ হলে এই ভোগান্তি আর থাকবে না। তিনি আরও জানান, এক সময় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পানি মাসকান্দার বিলে নামত। কিন্তু এখন সেখানে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে প্লটসহ বহুতল ভবন নির্মাণ হওয়ায় এই পানি নামতে পারছেন বলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।

×