নিজের তৈরি ড্রোনের পাশে সবুজ
ককশীট দিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন চালকবিহীন ছোট বিমান। আকাশেও উড়িয়েছিলেন। বিমানের পর এবার জমিতে কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ভ্যানচালকের ছেলে সবুজ সরদার (২৯)। ড্রোনটি রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রোন তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এটি দিয়ে আবাদি জমিতে কীটনাশকসহ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে।
সবুজ সরদার ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর মহেশপুর গ্রামের ভ্যানচালক একরামুল সরদারের ছেলে। ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন দিনাজপুর শহরের একটি বেসরকারী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে।
প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দেয়ার পর অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি তার। ভ্যানচালক বাবার সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে সবুজের স্বপ্ন ছিল নিজের তৈরি বিমান আকাশে ওড়াবেন। শখ থেকে মাত্র ৪৫ দিনে তৈরি করেন চালকবিহীন ছোট বিমান। স্বপ্ন দেখতে থাকেন মেধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিপ্রধান এই দেশের জন্য কিছু করার । শুরু হয় দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ। অর্থাৎ চালকবিহীন ড্রোন তৈরি। তিন মাসের প্রচেষ্টায় সফল হন সবুজ।
ড্রোন তৈরির কারিগর সবুজ সরদার বলেন, সব সময় ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। টাকার অভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এর আগে চালকবিহীন ছোট বিমান তৈরি করেছি। কিন্তু সব সময় একটা স্বপ্ন ছিল, কৃষিকাজের জন্য কিছু একটা করার। তারপর শুরু হয় এই ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা। ড্রোন তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে। এখন আমার তৈরি ড্রোন আকাশে ওড়ে। জমিতে স্প্রে করা যায়।
ড্রোনটি দুই লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে পারে এবং স্প্রে করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ড্রোন তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এখানে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে আকাশে উড়তে পারবে। এই ড্রোন দিয়ে ৩০ মিনিটে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব।
সবুজ বলেন, একবার চার্জ করলে ড্রোনটি ৩০ মিনিট আকাশে উড়তে পারবে। রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন সরদার বলেন, হঠাৎ করে সবুজের এই উদ্ভাবন দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। যা করছে তা দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। কারণ এখন সবকিছু যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে। তাই সবুজের এই আবিষ্কার যদি সরকারীভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে দেশের কৃষকের উপকার হবে।