পারভীন খাতুন ও শাকিবুল হাছান
ঈদ করতে অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসার সময় বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে নদীতে পড়ে অবুঝ দুই শিশু (ভাই- বোন) মারা গেছে। আজ সোমবার জানিয়েছে এক সপ্তাহ পর লাশ ফেরত দেওয়া হতে পারে।
১৫ বিজিবি সূত্র জানা গেছে, নিঁখোজের প্রায় ৪০ ঘন্টা পর লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট সীমান্ত সংলগ্নের অদুরে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি'র অধীনে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর কাশিয়াবাড়ি সীমান্তের (জিরো লাইন) নোম্যান্স লাইনের দিগলা কুরা নদীতে ভাই - বোনের লাশ ভেসে উঠে। মৃত দুই ভাইবোন হলো পারভীন খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাছান(৬)। নিহত দুই সহোদর কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতী গ্রামের রহিম উদ্দিন ও ছামিনা বেগমের সন্তান। আজ সোমবার বিজিবি শিশু দুইটির স্বজনদের জানিয়েছে বিএসএফ শিশু দুই টির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র চেয়েছে। তাহলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লাশ ফেরত দিতে পারে।
জানা গেছে, সীমান্ত গ্রামের এই দম্পতি জীবিকার টানে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দিল্লিতে বসবাস করে আসছিল। তারা ঈদ করতে প্রায় এক যুগ পর গত ১ জুলাই দিল্লী হতে দুই সন্তান নিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। সীমান্তে চোরাচালান চক্রের দালালদের মাধ্যমে চোরাই পথে রবিবার ভোররাতে ৯৪৩ নং মেইন পিলারের পাশে ফুলবাড়ির কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তে আসে। অন্ধকারে দালাল চক্র বিএসএফের উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারেনি। পরিবারের সবাইকে কাঁটাতার পার করে নদী পথে নিয়ে আসে। এ সময় হঠাৎ করে ভারতের শেটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যদের নজরে পড়ে যায়। বিএসএফ লাইট জ্বালিয়ে তাদের দেখে ফেলে ও ধাওয়া করে। দালালরা ঘটনার আকর্ষিকতায় পালিয়ে যায়। অবুঝ দুই শিশু কে নিয়ে বাবা- মা নদীতে ঝাপ দেয়। পিতা রহিমের কাছে ব্যাগ থাকায় মার কাছে সন্তান দুই টি ছিল। মা ও সন্তান কেউ সাঁতার জানত না। নদীর স্রোতের টানে রাতের অন্ধকারে মায়ের হাত হতে ছুটে যায় দুই সন্তানের হাত। এভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় শিশু দুইটি। নির্বাক মা- বাবা সেখানে চিৎকার চেচামেচি করে সকাল হওয়া পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করে। সকালে গ্রামবাসিরা পানিতে অনেক খোঁজাখুজি করে পায়নি।
ঘটনার প্রায় ৪০ ঘন্টা পর শিশু দুই টির লাশ নদীতে ভেসে ওঠে।
লাশ দুইটি ভারতের ভুখন্ডে নদীতে ভেসে ওঠায় বিজিবি'র মাধ্যমে বিএসএফ পতাকা বৈঠকে মাধ্যমে জানান হয়। বিএসএফ লাশ উদ্ধার করে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার পুলিশ কে মৃতদেহ হস্তান্তর করে।
নাগেশ্বরী উপজেলা শুকাতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেছের জানান, মৃত শিশুদের লাশ ভারত হতে ফেরত পেতে কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পের সহায়তা নিতে এসেছে । মৃত শিশু দুইটি ও তার বাবা - মায়ের পরিচয় সনাক্তের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে।
লালমনিহাট ১৫বিজিবি’র অধীনে কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, নদীতে লাশ দুটি ভাসতে দেখে উভয় দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক করে জানানো হয় । বৈঠকে ভারতের ১৯২ বিএসএফের শেটি -এক ক্যাম্পের বিএসএফের ইন্সপেক্টোর এস এইচ শংকর কুমারসহ ৬সদস্য দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।
কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন আরও জানান, বিএসএফ জানিয়েছে, মর্গে শিশুদের লাশ এক সপ্তাহ থাকবে । এর মধ্যে বাংলাদেশি কাগজপত্র পাওয়া গেলে বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে লাশ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর হতে পারে।