ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

কয়েক বছরে মরেছে ৪৫ ডলফিন

কয়েক বছরে মরেছে ৪৫ ডলফিন

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় এবং তদারকির অভাবে হালদা নদীতে বেড়েছে দূষণ। ঘটছে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু। কয়েক বছরে মারা পড়েছে ৪৫টি ডলফিন। চোরের দল নির্বিচারে মা মাছ শিকার করছে। কলকারখানা ও খামারের নানা রকমের দূষণে নষ্ট হচ্ছে হালদার পানি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র তদারকির অভাবে শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর ডিম সংগ্রহের সময়টুকু (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) ছাড়া দেখা মেলে না মৎস্য বিভাগের কর্তাদের। জেলা মৎস্য বিভাগের অধীনস্থ পুরো চট্টগ্রাম বিশেষ করে হাটহাজারী ও রাউজানে জনবল সংকট রয়েছে। স্থানীয় চিহ্নিত জেলে ও মাছ চোররা প্রতিদিন ঘেরা জাল, বিষ ঢেলে ও বড়শি বসিয়ে মা মাছ ও ডলফিন শিকার করছে। এছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। ফলে ইঞ্জিনচালিত নৌকার আঘাতে মারা পড়ছে মা মাছ ও ডলফিন। সূত্র জানায়, ২০২১-২০২২ (জুলাই) এক বছরে ৬৮টি অভিযানে মাত্র দুজনকে ১৫ দিন ও একমাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। তাই মাছ চোররা চিহ্নিত হলেও স্থানীয় প্রতিনিধিদের যুক্ত না করার কারণে ধরা পড়ে না। কারণ মাছ শিকারিরা মূলত রাত ও ভোরের সময় নদীর নির্জন জায়গায় জাল বসান। মাছ চোররা স্থানীয় ও চিহ্নিত। তাই নদীর পাড় এলাকায় তৎপরতা বাড়াতে হলে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। হালদার দেখভালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা গেলে মাছ শিকারিদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন, আবাসিক এলাকা, বটতল ও আশপাশের কলকারখানার বর্জ্য বানশাহী খাল কুয়াইশ হয়ে হালদাতে গিয়ে পড়ে। একইভাবে বড়দীঘিপাড়ের ইছামতী ও কাটাখালী খাল হয়ে রাসায়নিক বর্জ্য হালদায় গিয়ে পড়ছে। এছাড়া হালদা নদীর আশপাশ এলাকায় অন্তত কয়েকশ’ গরুর খামার রয়েছে, যার কোনোটিতে নেই ইটিপি। এসব খামারের গোবরের বর্জ্য সরাসরি বা সংযুক্ত খাল হয়ে হালদায় পড়ছে। এছাড়া কুয়াইশ নজুমিয়াহাট বামনশাহী খাল হয়ে দূষণ বাড়লেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো খবর নেই। আমানবাজারের পূর্বে বাথুয়া (সোনা তোয়ান্নের দোকান) এলাকায় একটি খামারের কয়েকশ’ গরুর বর্জ্য লালচন্দ্রবিল হয়ে হালদায় গিয়ে পড়ছে। বর্জ্যরে গন্ধে টিকতে পারছে না আশপাশের বাসিন্দা। রাউজান হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ডেইরি ফার্ম, পোল্টি ফার্মের বজ্য খাল, ছড়া দিয়ে গিয়ে হালদা নদীতে পড়ছে।  জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ৩৮৯টি, রাউজানে আছে ৪৩৪টি এবং ফটিকছড়িতে কয়েকশ’ গরুর খামার রয়েছে।

সেল্টিকের অজেয় যাত্রা থামাল বায়ার্ন

সেল্টিকের অজেয় যাত্রা থামাল বায়ার্ন

নিজেদের ঘরের মাঠে উড়ছিল সেল্টিক। সর্বশেষ ৩৩ ম্যাচে নিজেদের সমর্থকদের সামনে পরাজয় দেখেনি স্কটল্যান্ডের ক্লাবটি। অবশেষে সেল্টিককে সেই ভুলে যাওয়া হারের স্বাদ উপহার দিল বায়ার্ন মিউনিখ। বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে প্লে-অফের প্রথম লেগে জার্মান জায়ান্টরা ২-১ গোলে হারাল সেল্টিককে। সেইসঙ্গে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর ঘরের মাঠে প্রথম হার দেখল ব্রেন্ডন রজার্সের সেল্টিক। বায়ার্নের জয়ের দিনে হেরে গেছে এসি মিলান, মোনাকো এবং আটালান্টা। হল্যান্ডের ক্লাব ফেইনুর্ড ১-০ গোলে পরাজিত করে এসি মিলানকে। বেনফিকাও একই ব্যবধানে হারের স্বাদ উপহার দেয় ফরাসি ক্লাব মোনাকোকে। দিনের আরেক ম্যাচে ক্লাব ব্রুগে ২-১ ব্যবধানে আটালান্টাকে হারিয়ে শেষ ষোলোর টিকিট কাটার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।  উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটে এবার শুরু থেকেই বিপাকে পড়ে জায়ান্ট ক্লাবগুলো। যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি এবং বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলগুলো। মঙ্গলবারই মাঠে নামে এই চার ক্লাবের তিনটি। তার একদিন পর বুধবার সেল্টিক পার্কে সেল্টিকের মুখোমুখি হয় বায়ার্ন মিউনিখ। ঘরের মাঠে অজেয় সেল্টিকের সামনে এদিন শুরু থেকেই সতর্কতার সঙ্গে খেলতে থাকে জার্মান জায়ান্টরা। তবে প্রমার্ধের ৪৫ মিনিটে মাইকেল ওলিসে গোল করে বায়ার্নকে প্রথম এগিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৪৯ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দারুণ ফর্মে থাকা হ্যারি কেন। সেইসঙ্গে গত মৌসুমের শুরু থেকে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের (৭৩) নজির গড়েন বায়ার্নের এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। ম্যাচের বয়স যখন ৭৯ মিনিট তখন এক গোল পরিশোধ করে দাইজেন মায়েদা স্বাগতিকদের কিছুটা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত হার এড়াতে পারেনি সেল্টিক।  ফলে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে জয় নিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন উজ্জ্বল করল বায়ার্ন মিউনিখ। অন্যদিকে ইউরোপ সেরার মঞ্চে টিকে থাকতে সেল্টিককে দ্বিতীয় লেগে জিততে হবে বায়ার্নের মাঠে। তবে ইতিহাস এখন কথা বলছে বায়ার্নের পক্ষে। কেননা, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বশেষ ১৩ নকআউট পর্বে দেখা যায় প্রথম লেগে এগিয়ে থাকা বায়ার্ন মিউনিখই সবসময় পরের রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করেছে। এদিকে, ফেইনুর্ড তাদেরই মাঠে এসি মিলানকে পরাজিত করে ইগর পাইক্সাওর একমাত্র গোলে। ম্যাচের ৩ মিনিটে গোল হজম করার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইতালির অন্যতম সেরা ক্লাবটি। ১০ জনের মোনাকোর বিপক্ষে ম্যাচের ৪৮ মিনিটে বেনাফিকার একমাত্র গোলটি করেন ভ্যানগেলিস পাভলিদিস। 

ব্যাংকে ফিরছে টাকা

ব্যাংকে ফিরছে টাকা

ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.৭৭ লাখ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৭.৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১৬.৫৪ লাখ কোটি টাকা। টানা দশ মাস ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকার পর ধীর গতিতে হলেও গত চার মাস ধরে ব্যাংকে ফিরতে শুরু“ করছে এসব টাকা। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসেই ব্যাংকে ফিরেছে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।  কেন্্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বর শেষে মানুষের হাতে  ছিল ২.৭৭ লাখ কোটি টাকা ছিল। ডিসেম্বর শেষে সেটি কমে ২.৭৬ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এটি প্রায় ৮.৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২.৫৫ লাখ কোটি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়। কারণ, ব্যাংকের বাইরে থাকলে টাকার হাতবদল হওয়া কমে যায়, যা দিনশেষে ‘মানি ক্রিয়েশন’ কমিয়ে দেয়। মানুষের হাতে থাকা টাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাংকে ফিরলে একদিকে যেমন ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়, অন্যদিকে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বাড়ায় দেশে বিনিয়োগ বাড়ার মতো পরিস্থিতি  তৈরি হয়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করায় এবং সুশাসন বাড়ায় ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ গত কয়েক মাস ধরে কমছে। এটা পুরো অর্থনীতির জন্যই একটা ভালো লক্ষণ। তবে ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তখন ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ যে হারে বেড়েছে, বর্তমানে তার চেয়ে কম হারে ব্যাংকে সেগুলো ফেরত আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২.৪৬ লাখ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতিজনিত চাে পর কারণে এরপর থেকে প্রতিমাসেই এর পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। পরে গত বছরের জুলাই শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২.৯২ লাখ কোটিতে পৌঁছায়। তবে বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়াসহ নানা কারণে আগস্টে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ওই মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ খুব বেশি বাড়েনি। সেপ্টেম্বর থেকে ফিরতে শুরু করে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা। এদিকে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা মাফিক হচ্ছে না। টানা তিন মাস প্রবৃদ্ধির হার অল্প করে বাড়লেও ডিসেম্বরে সেটি আগের মাসের তুলনায় কমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.৭৭ লাখ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৭.৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১৬.৫৪ লাখ কোটি টাকা। গত আগস্টে আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল আগের ১৮ মাসের সর্বনিম্ন, ৭.০২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করে। ওই মাসে আমানত বাড়ে ১৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা বা ৭.২৬ শতাংশ। অক্টোবরে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয় ৭.২৮ শতাংশ, আমানত দাঁড়ায় ১৭.৫৫ শতাংশ। নভেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি আরও কিছুটা বেড়ে ৭.৪৬ শতাংশ হয়। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নজরে আসার পর গ্রাহকদের আস্থাহীনতাই এই কম আমানত প্রবৃদ্ধির কারণ। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ঠিকমতো ফেরত না পাওয়ায় খাতটি নিয়ে আতঙ্ক বেড়ে যায়। আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তত ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়া, বেনামী ঋণ ইস্যু ঠেকানোসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।