ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৬ মার্চই বাঙালীর শক্তি, ঘুরে দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৬ মার্চ ২০২০

২৬ মার্চই বাঙালীর শক্তি, ঘুরে দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র

মোরসালিন মিজান ॥ একেবারেই ভিন্ন বাস্তবতা। হঠাৎই সব কিছু থমকে গেছে। স্থবির হয়ে গেছে। বাইরে কেউ তেমন নেই। স্ব স্ব গৃহে অবস্থান করছে। কোভিড ১৯ ভাইরাসের হুমকির মুখে এই পরিবর্তন। অন্যান্য বছরের মতো আজ আর ঘটা করে উদ্যাপিত হবে না স্বাধীনতা দিবস। দৃশ্যমান কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না। তবে হৃদয়ে একাত্তরের চেতনা জাগ্রুক আছে। ২৬ মার্চই বাঙালীর শক্তি। ঘুরে দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র। এ মন্ত্রে আজ নতুন করে উজ্জীবিত হবে মানুষ। যত বড় চ্যালেঞ্জই সামনে আসুক না কেন, মোকাবেলা করার নতুন শপথ নেবে। পাকিস্তানী শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছিল বাঙালীকে। শেষতক ১৯৭১ সালের ২৬ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর পর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। দখলদার পাকবাহিনীকে যুদ্ধে পরাস্থ করে দেশমাতাকে মুক্ত করেছিল বীর বাঙালী। স্বাধীনতা বাঙালীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস আসতে না আসতেই চারপাশের রংটা বদলে যায়। সবখানেই দৃশ্যমান হয় লাল-সবুজ। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বিজয় দিবস সামনে দারুণ সব পোশাক তৈরি করে। মাত্র দুটি রঙে কত রকমের শাড়ি পাঞ্জাবি থ্রিপিস! আর টিশার্টের কথা তো বলাই বাহুল্য। জাতীয় পতাকার রংয়ে সেজে ঘর থেকে বের হয় বাঙালী। মুক্তির আনন্দে মাতে। শহর ঘুরে বেড়ায়। গোটা রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেসব আয়োজনে যোগ দেন সব বয়সী মানুষ। তারও আগে থেকে উড়তে থাকে জাতীয় পতাকা। ফেরি করে প্রিয় পতাকা বিক্রি করতে দেখা যায় হকারদের। ব্যক্তিগত গাড়িতে, এমনকি রিক্সায় ছোট্ট করে পতাকা জুড়ে দেয়া হয়। প্রধান প্রধান সড়ক সংলগ্ন সুউচ্চ ভবনে আলোক সজ্জা করা হয়। লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয় ভবনগুলো। সব মিলিয়ে বর্ণিল হয়ে ওঠে সময়টা। তবে এবার বিবর্ণ। লাল-সবুজের উৎসব সেভাবে দেখা যাবে না। সব যেন গিলে খাচ্ছে কোভিড ১৯। প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সব ধরনের উদ্যাপন বন্ধ রাখা হয়েছে। বাইরে বের হওয়া বারণ। গণজমায়েত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। নতুন এ বাস্তবতায় কীভাবে উদ্যাপিত হতে পারে স্বাধীনতা দিবস? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় স্বাধীনতা দিবসে নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজক, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আজ তো আমাদের হাতে অনেক সময়। এ সময়টুকু মুক্তিযুদ্ধের বই পাঠ করে সুন্দর কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে। আনুষ্ঠানিকতা তো সব সময়ই হয়। এবার না হয় হলো না। তাতে কী? স্বাধীনতার কেন প্রয়োজন হয়েছিল? কোন সে কারণে আমরা অস্ত্র হাতে লড়েছিলাম? সে ইতিহাস আজ আমরা গভীর ভাবে স্মরণ করতে পারি। আমাদের সন্তানদের পাশে নিয়ে একাত্তরের গল্প বলতে পারি। একই বিষয়ে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শতভাগ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাঙালী। এদিন থেকেই তো শুরু হয়েছিল শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই। পাকিস্তানী শাসন শোষণ গণহত্যার বিরুদ্ধে যার যা আছে তাই নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল সাধারণ জনগণ। আজ তেমনটি না হলেও, করোনা নামের শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে হবে আমাদের। সেই সাহস শক্তি গ্রহণ করতে হবে আজকের দিনটি থেকে।
×