ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৪৯ বছর

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৬ মার্চ ২০২০

স্বাধীনতার ৪৯ বছর

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৯তম বছরটি এসেছে কিছুটা ব্যতিক্রমী বার্তা নিয়ে। এটি এমন একটি কঠিন ক্রান্তিকাল কিংবা বলা যায় দুঃসময়, যখন বাংলাদেশসহ প্রায় সমগ্র বিশ্ব মোকাবেলা করছে ভয়াবহ প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে। সত্যি বলতে কি, এ এক কঠিন প্রতিপক্ষ, অদৃশ্য প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের মরণপণ লড়াই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যে কোন মূল্যে যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে এই লড়াইয়ে জিততে হবে মানুষকে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশও এ থেকে পিছিয়ে নেই কোন অংশে। বরং যথাযথ প্রস্তুতি ও সতর্কতা নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে করোনা মোকাবেলায়। চলতি বছর সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে মুজিববর্ষÑ জাতির পিতা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে সীমিত পর্যায়ে পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। স্বাধীনতা দিবসেও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের কর্মসূচী বাতিল করা হয়েছে। তবুও স্বাধীনতা দিবস বলে কথা। সুতরাং স্বাধীনতার সূর্য উঠবেই, বিজয় নিশানও উড়বে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, ঘরে ঘরে, আকাশে-বাতাসে সর্বত্র। কেননা স্বাধীনতা অমলিন, চিরদিন, চিরকালের। আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দিন বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার জন্য এ দেশের মানুষকে দীর্ঘ নয় মাস পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। আগামী বছর বাংলাদেশের অমল ধবল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে বড় অর্জনগুলোর কথা না বললেই নয়। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের ধারাবাহিকতায় যে অর্জনগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বপ্নের পদ্মা সেতু, যেটি নিজস্ব অর্থে চীনের সহায়তায় নির্মাণ হচ্ছে। এর বাইরেও রাশিয়া ও ভারতের সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প। দেশ এখন বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্রমবর্ধমনা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম, মংলার পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাজ এগিয়ে চলেছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে দেশ। গার্মেন্টস রফতানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। রফতানি আয়ও ক্রমবর্ধমান। বেড়েছে প্রবাসী আয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিধারায় মাথাপিছু আয় বেড়ে প্রায় ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি। জাতীয় প্রবৃদ্ধি চলতি বছর প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.৩৩ শতাংশ। সর্বোপরি বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু, প্রায় ৭২ বছর। এসবই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল বলতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে পিলখানায় ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের বাসস্থানে হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বস্তি, টার্মিনালসহ জনবহুল এলাকায় ঝঁাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। তাদের এই ভয়াবহ তা-ব চলে সারারাত। এই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পূর্বক্ষণে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মূলত ২৬ মার্চ প্রত্যুষেই শুরু হয় বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধ। বলা চলে নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তথা চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এ দিনই। ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছি একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার জন্য এমন আত্মত্যাগ খুব কম জাতিই করেছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্যাপনের দ্বারপান্তে আমরা। আর এক বছর পরই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এবারও নানা আনুষ্ঠানিকতা, নানা আয়োজনে এই মহান দিবসটিকে স্মরণ করা হচ্ছে। আমরা এই মহান দিনটিতে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহকর্মী মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সকল নেতাকে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনদের। যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
×