ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিল্লাল বিন কাশেম

যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে রুশদের সামনে আর বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৫ মার্চ ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে রুশদের সামনে আর বিকল্প নেই

১৯৯১ সাল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। এরপর রুশ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হন বরিস ইয়েলৎসিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিশ্ব রাজনীতিতে মস্কো খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ওয়াশিংটনের মারপ্যাঁচের কাছে ক্রমেই অসহায় হয়ে পড়ছিল রাশিয়া। ১৯৯৯ সাল। রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন সাবেক কেজিবি প্রধান ভ্লাদিমির পুতিন। দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কখনও কনকনে শীতে উদাম শরীরে ঘোড়া চালিয়ে গণমাধ্যমের নজরে আসেন। সমুদ্রে জ্যান্ত হাঙ্গরের মুখ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আবার কখনও তরুণ জুডো খেলোয়াড়দের পরাজিত করা। এসবের মাধ্যমে রুশদের মন জয় করেন পুতিন। ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই রুশদের সাবেক সোভিয়েত আমলের মতো বৃহৎ দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখান। যে কথা সেই কাজ। ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা রাজনৈতিক ছকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে থাকেন। বলা হয়ে থাকে গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন শিবির গোপনে ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছে। ১৯৯৯ থেকে ২০২০ সাল। রুশ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। অপরদিকে দেশটির বিরোধী শক্তিকে শক্ত হাতে সামলেছেন। এসবের মাধ্যমে রাশিয়ার ম্যাচোম্যানের তকমা নিয়েছেন সাবেক এই গোয়েন্দা। এবার আজীবন দেশটির ক্ষমতায় থাকার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তিনি। ওই পরিকল্পনায় রুশ সংবিধানে পরিবর্তন আনার কথা বলা আছে। সংবিধানের এ পরিবর্তন আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনকে ফের ক্ষমতায় ফিরতে সহায়তা করবে। সংবিধানের এই পরিবর্তন আনা হলে ৬৭ বছর বয়সী রুশ নেতা পুতিন চাইলে আগামী ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় শাসন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। মহাকাশে পাড়ি জমানো প্রথম রুশ নারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা ও বর্তমানে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য তিনি সম্প্রতি কোন রুশ প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমা বাতিল করে একটি প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবটি দ্রুত রুশ পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষে পাস হয়। ৮৩ বছর বয়সী সাবেক সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা রাশিয়ায় উচ্চ পর্যায়ের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। এদিকে পুতিন সরকারের সমালোচকরা তেরেসকোভার এ প্রস্তাব ভালভাবে নেয়নি। তারা এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণ দেয়। এতে কাজ হয়নি। বরং রুশ সংসদ সদস্যরা আরও একগুচ্ছ আইন পাস করিয়েছে যা পুতিনের পক্ষে যায়। রুশ সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্যে আগামী মাসে দেশজুড়ে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে রাশিয়ায় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পুতিন। সোভিয়েত একনায়ক যোশেফ স্টালিনের পরই পুতিনই সবচেয়ে বেশি দিন দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন। ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত দুই দফা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুতিন। এরপর দুই দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু দিমিত্রি মেদভেদেভ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। বলা হয়, মেদভেদেভ প্রেসিডেন্ট হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন পুতিন। পেছন থেকে সকল কলকাঠি তিনিই নাড়েন। দিমিত্রি মেদভেদেভের সময়ই রুশ প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে ফের রুশ প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আসেন পুতিন। ২০২৪ সালে তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ভøাদিমির পুতিন সম্প্রতি রুশ পার্লামেন্টে এই পরিকল্পনা প্রকাশের পর দেশটির প্রধান বিরোধী নেতা এ্যালেক্সি নাভালনি এর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এটি আজীবন ক্ষমতায় থাকার নীল নক্সা ছাড়া আর কিছু নয়। এ্যালেক্সি নাভালনি আরও বলেন, পুতিন গত কুড়ি বছর রাশিয়ার ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। কিন্তু মানুষের জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনি। তার পরও পুতিন ঘনিষ্ঠরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে এখন পুতিন ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। সূত্র : -এপি, আল জাজিরা ও অন্যান্য ওয়েবসাইট অবলম্বনে
×