ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

করোনা সচেতনতায় সরব তারকা ক্রিকেটাররা

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২৫ মার্চ ২০২০

করোনা সচেতনতায় সরব তারকা ক্রিকেটাররা

করোনায় কাঁপছে বিশ্ব, কাঁপছে ক্রীড়াঙ্গন, কাঁপছে ক্রিকেট। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সিরিজ বাতিল অথবা স্থগিত হয়ে গেছে। বন্ধ প্রায় প্রতিটি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু সে অর্থে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তো তৈরি হয়ই-নি, বরং দেখা মিলছে উল্টো চিত্রেরও। কোয়ারেন্টাইন ভেঙে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। অনেকেই আবার খাদ্য মজুদ করা শুরু করেছেন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করতে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে প্রকাশিত ভিডিওটির ক্যাপশনে হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘স্টে হোম, স্টে সেফ’ অর্থাৎ ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’। তিনি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হোটেলে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানোর পর সতর্কতার অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছেন সময়ের অন্যতমসেরা এ অলরাউন্ডার। সচেতনতামূলক বার্তায় সাকিব দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করার পাশাপাশি সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে রোগমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, সঠিক সিদ্ধান্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই মহামারীকে মোকাবেলা করা সম্ভব। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারী রোগ বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন বাংলাদেশেও অনেক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সতর্কতাই পারে দেশকে সুস্থ রাখতে, আমাদের সুস্থ রাখতে। সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমরা এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব এবং আমাদের দেশকেও মুক্ত রাখতে পারব। যেমন- সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় সঠিক শিষ্টাচার মেনে চলা।’ সাকিব বলেন, ‘যদি কেউ বিদেশ ফেরত থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার নিজেকে ঘরে রাখা এবং ঘর থেকে যেন বাইরে না যান, সেটা খেয়াল রাখা। একই সময়ে আরও একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশী এসে যেন আপনার সঙ্গে দেখা না করে।’ তিনি আরও জানান, ‘আমি মাত্রই যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছি। যাত্রাপথে একটু হলেও ভয় কাজ করেছে, তবে চেষ্টা করেছি নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখার। ... যেহেতু আমি বিমানে ভ্রমণ করে এখানে এসেছি, তাই একটু হলেও ঝুঁকি আছে আমার। সে কারণে আমি নিজেকে আলাদা করে রেখেছি। আমি আমার বাচ্চার সঙ্গেও দেখা করিনি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব যে, সবাই যেন এ নিয়মগুলো মেনে চলেন। কারণ আমাদের এই সামান্য ত্যাগটুকুই পারে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, সুস্থ রাখতে এবং আমাদের সুস্থ রাখতে। আশা করি, আপনারা আমার কথাগুলো শুনবেন ও কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, অনেকেই তিন-চার-পাঁচ এমনকি ছয় মাসের জন্য খাবার সংগ্রহ করছেন। আমার ধারণা, খাবারের ঘাটতি হবে না। আমরা কেউ না খেয়ে মারা যাব না। আমরা আতঙ্কিত না হই। সঠিক সিদ্ধান্তই পারে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্ত করতে এবং সেটা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব।’ ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, আশা করছি, খুব প্রয়োজন ছাড়া এই সময় আপনারা ভ্রমণ করবেন না কিংবা ঘরের বাইরে যাবেন না। আপনারা সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিজের যতœ নেবেন, পরিবারের যতœ নেবেন এবং নিজের ও পরিবারের সম্পর্কে খেয়াল রাখবেন।’ জাতীয় দলের সদ্যবিদায়ী অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম এই ইস্যুতে দিয়েছেন সতর্ক বার্তা। মাশরাফি আবার নড়াইলে উদ্বোধন করেন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইল সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার উদ্বোধন করতে গিয়ে দেয়া বক্তব্যে করোনা সতর্কতায় মাশরাফি বলেন, ‘ভয়টা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে আপনারা দেখছেন। সতর্ক থাকতে হবে। বাসায় সবাইকে সতর্ক করতে হবে আমি আশা করি আপনারা করবেন। সচেতনতায় এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমি আশা করব নড়াইলের আমরা প্রত্যেকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকব। পরিশেষে সবাই নিরাপদ থাকুক এটাই দোয়া করছি কামনা করছি।’ আরেক তারকা মুশফিকুর রহীম শেয়ার করা ভিডিও বার্তায় মুশফিক বলেন, ‘করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দু লাখের বেশি মানুষ। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব খেলাধুলা। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কয়েকজনকে করোনাভাইরাস আক্রান্তে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এক ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, হাত ঘন ঘন সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দুই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অর্থাৎ খুব জরুরী না হলে ভিড় বা জনসমাগম এড়িয়ে চলা।’ মুশি আরও বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা প্রবাসী ভাই বোনদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজের পরিবার ও দেশের সবার সুস্থতার জন্য কমপক্ষে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুন। মনে রাখবেন আপনি শুধু আপনার জন্য নয়, আপনার সন্তান, পরিবার, আত্মীয় স্বজন পারা প্রতিবেশী এবং দেশের মানুষের জন্য নিজেকে সচেতন রাখবেন। আর দয়া করে এখন কেউ এক সঙ্গে বাইরে ঘুরতে বের হবেন না। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোন তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কারণ অনেকে বিভিন্নভাবে ভুল অথবা মিথ্যা তথ্য ছরাতে পারে।’ মুশফিক বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না। আমি নিজে এবং পরিবারের সচেতনতার জন্য এখন বাসায় অবস্থান করছি। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছি না। যতটুকু সম্ভব সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। নিজে সুস্থ থাকুন ও অন্যকেও সুস্থ থাকার সহযোগিতা করুন। মনে রাখবেন আমার হাতেই আমার সুরক্ষা।’ ওদিকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর। আহ্বান জানিয়েছেন ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় লেখা নিজের কলামে শচীন বলেন, ‘বিশ্ব এখন মহামারী কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ সময় আমাদের শিক্ষা নিতে হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো সংস্করণ থেকে।’ শচীন লিখেছেন, যা আপনার অজ্ঞাত তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পুরস্কার আপনাকে দিয়ে থাকে টেস্ট ক্রিকেট। ধৈর্য ধারণের মূল্য শেখায় আপনাকে। ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি যখন পিচের কন্ডিশন কিংবা বোলাররা কেমন বোলিং করবে তা বুঝতে পারেন না, তখন আত্মরক্ষা হয়ে ওঠে আক্রমণের সেরা অস্ত্র। তিনি লেখেন, আমরা যদি সফলতার সঙ্গে করোনার মোকাবেলা করতে চাই, তাহলে এ মুহূর্তে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।’ এ্যালেক্স হেলস বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমি এই মুহূর্তে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া কর্তব্য মনে করছি। অন্য অনেক বিদেশী ক্রিকেটারের মতোই আমি দ্রুত পাকিস্তান ত্যাগ করেছি। কারণ, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করেছি, এই সময়টায় হাজার হাজার মাইল দূরে লকডাউনে পড়ে না থেকে পরিবারের পাশে থাকাই উত্তম। ঘুম থেকে ওঠার পরই আমার মনে হচ্ছিল আমি জ্বরাক্রান্ত। এ জন্যই সরকারের পরামর্শ মেনে আমি নিজেকে কোরারেন্টাইনে নিয়ে গেলাম। আমার শুষ্ক কাশি এবং কফ এখনও রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বোধ করছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই এই অবস্থা শেষ হবে। না হয়, শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই আমি চেকআপ করাব।’ কিংবদন্তি পাকিস্তান ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম পিএসএএলে খেলা সবার সুস্থতা কামনা করেছেন, ‘আমাদের ভালবাসার পিএসএলে অন্যরকম অবদান রাখায় দেশী-বিদেশী সব খেলোয়াড়কে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সবাইকে যার যার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আমরা সবার নিরাপত্তা প্রত্যাশা করি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন বিশ্বের পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।’ শহীদ আফ্রিদির মন্তব্য, ‘পিসিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। তবে স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাই আগে।’ বিশেষ করে যাদের বাড়ি ফেরার তাড়া আছে।’
×