ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা নিয়ে দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৪ মার্চ ২০২০

করোনা নিয়ে দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের ভাবনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমাকে ধরোনা/ধরলে হবে করোনা/একটু দূরে সরোনা/প্লিজ কেউ মরোনা!’ ... ফেসবুকে মজা করে একজনের স্ট্যাটাস এটি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দেশ এখন কাঁপছে করোনা-আতঙ্কে । প্রবাস-ফেরত কয়েক লাখ বাংলাদেশীদের নির্বুদ্ধিতা ও হঠকারিতায় দেশের প্রত্যেকটি মানুষ আজ মৃত্যুঝুঁকিতে! ক্রীড়াঙ্গনের ক্রীড়াবিদরাও এর থেকে বাইরে নন। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তারা এখন খেলাধুলা থেকে আপাতত বিরত। বেশিরভাগই অবস্থান করছেন নিজেদের বাড়িতে, পরিবারের সঙ্গে। তবে ব্যতিক্রম একজন। সাতক্ষীরার এল্লারচরের দোহা কোলা গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ আবদুল মজিদ। মাছের ঘের আছে তার। আর আছে প্রচুর ধানী জমির মাঠ। প্রচণ্ড ধর্মপরায়ণ। স্ত্রী আঙ্গুরা বেগম। তাদের চার সন্তান। সবাই মেয়ে। তিন মেয়ে বাবার হুকুমে পর্দা করে চলে। বোরকা পড়ে বাইরে যায়। তবে দ্বিতীয় মেয়েটি একটু ব্যতিক্রম। এ মেয়েটিই একসময় সাংঘাতিক রক্ষণশীল ও গোঁড়া মনোভাবের বাবাকে রাজী করিয়ে এ্যাথলেটিক্স ক্যারিয়ার শুরু করলো। একসময় জাতীয় পর্যায়ে সফলও হলো। এমনই সফল, ১০ বার হলো দেশের দ্রুততম মানবী (সাবেক স্প্রিন্টার ফিরোজা বেগমের সঙ্গে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, সবচেয়ে বেশি দ্রুততম মানবী নাজমুন নাহার বিউটি, ১৯ বার)! পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছেন তাকে। হ্যাঁ, কৃষ্ণকলি সুর্দশনা শিরিন আক্তারের কথাই বলছি। ২০০৭ সালে সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে ভর্তি হন শিরিন। এখন খেলছেন বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর হয়ে। তবে নিজের সুবিধার জন্যই নৌবাহিনী কৃর্তপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিকেএসপিতেই সবসময়ই অনুশীলন করেন কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফির কাছে। নিজ বাড়ি সাতক্ষীরাতে না গিয়ে ২৫ বছর বয়সী শিরিন এখন বিকেএসপির হোস্টেলের এক রুমে একাই থাকছেন। জনকণ্ঠকে জানালেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবের কদিন পর্যন্ত এখানে এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে আগে একা একাই অনুশীলন করতাম। এখন আর অনুশীলন করছি না। রুমে একাই থাকি।’ তারকা দৌড়বিদ শিরিন আরও জানালেন, ‘এখন বিকেএসপি ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে এখানকার স্টাফরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোয়ার্টারে থাকছেন। তাছাড়া মেইন গেটে নিরাপত্তা কর্মীরা তো আছেই। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।’ করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য কতটা সচেতন, এক্ষেত্রে কি করছেন জানতে চাইলে শিরিনের জবাব, ‘নিয়ম মেনেই চলছি। সচেতন আছি। বলতে পারেন এক রকম কোয়ারিনটাইনেই আছি! সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া ... এগুলো তো করছিই। আল্লাহর রহমতে পরিচিতজনদের এখনও কেউই এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। দেশের বাড়িতে আমার পরিবারেরও সবাই সুস্থ আছেন।’ বিদেশ-ফেরত বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে শিরিনের আকুতি, ‘আপনাদের কারণে দেশে আজ আতঙ্ক বিরাজমান। আমার পরিচিত কয়েকজন ইতালিতে বেশ কদিন ধরে গৃহবন্দী থেকে নিয়মের মধ্যে সুস্থভাবে থাকতে পারলে দেশে ফিরে আপনারা জনস্বার্থে সেটা কেন করতে পারবেন না? কেন আপনারা নিয়ম মেনে কোয়ারিনটাইনে থাকতে পারবেন না?’ তবে এত সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যেও আশাবাদী শিরিন, ‘আল্লাহর রহমতে সবাই যদি সচেতন থাকে, বিশেষ করে প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীরা, তাহলে শিগগীরই আমাদের দেশ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত হবে ইনশাল্লাহ।’ করোনা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তার একটি হচ্ছে থানকুনি পাতা খেলে নাকি এই রোগ সেরে যায়। এ নিয়ে শিরিনের বক্তব্য, ‘থানকুনি পাতার বিষয়টা আসলেই সত্যি নাকি মিথ্যা, তা বলতে পারবো না। বিশ্বাসও করি না, অবিশ্বাসও করি না। আমি তো এই পাতা অনেক আগে থেকেই এমনিতেই খাই। এইতো কদিন আগেই একবার খেলাম। এই পাতা খেলে শরীর এমনিতেই ভাল থাকে।’ সবশেষে শিরিন বলেন, ‘একমাত্র সচেতনতাই পারে এই দুর্যোগ থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে। এ জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সবাই দোয়া চাইবেন।’
×