ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোশ্যাল ভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ বিজয়ী ‘কিউর’

প্রকাশিত: ১৩:১১, ২৪ মার্চ ২০২০

সোশ্যাল ভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ বিজয়ী ‘কিউর’

‘হার্ভার্ড ন্যাশনাল মডেল ইউনাইটেড ন্যাশন্স-২০২০’ সম্মেলনে প্রায় ২ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছে বিশ্বের ৬০টি দেশ থেকে। সোশ্যাল ভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ (এসভিসি) একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রতিযোগিতা, যা বিশ্বব্যাপী সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে উৎসাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে উদ্যমী তরুণদের তাদের প্রজেক্ট জমা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখান থেকে বাছাই করা প্রজেক্ট বিশেষজ্ঞ বিচারকদের একটি প্যানেলের সামনে তিন দিনে তিন দফায় উপস্থাপন করতে হয়। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা সেরা প্রজেক্টের স্বীকৃতি দেয়, যা এবার অর্জন করেছে বাংলাদেশের প্রজেক্ট ‘কিউর’। ‘কিউর’ বাংলাদেশী তিন তরুণের গড়া একটি সফটওয়্যার প্রজেক্ট। কিউর মূলত হেলথ কেয়ার নিয়ে রোগী এবং ডাক্তারদের সহজ উপায়ে কানেক্ট করার প্রজেক্ট, যেখানে রোগীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে এবং ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো একটি সার্কেলে আনা হবে। বাংলাদেশি তিন তরুণ গড়া এই “কিউর” প্রজেক্টটি মূলত স্বাস্থ্য বিষয়ক একটা প্রজেক্ট। ২০১৯ সালে মালেশিয়ায় অনুষ্ঠিত আল শার্ক ইয়ুথ কনফারেন্স এ সেরা ২০ প্রজেক্ট এবং জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং ইনোভেটরস সামিট-২০১৮ তে বিশ্বের সেরা ৫০টি প্রজেক্টকে পেছনে ফেলে ‘বেস্ট আইডিয়া ইনোভেশান অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছিল এই প্রজেক্টটি। মূলত স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের হাতের মুঠোয় আনার জন্যেই এই প্রজেক্টটা। কিউর সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহামুদুল হাসান তন্ময় বলেন; কিউর মাধ্যমে ঘরে বসেই এক অ্যাপে পাওয়া যাবে সকল স্বাস্থ্যসেবা। কিউর অ্যাপে চিকিৎসক ও রোগীর জন্য থাকছে ‘চ্যাটিং অপশন’। রোগী তাঁর সমস্যাগুলো বলতে পারবেন, চিকিৎসক সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে তিনি তাঁর চেম্বারে দেখা করতে বলবেন। অনলাইনের মাধ্যমেই পেমেন্ট করা যাবে। চ্যাটের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও পাঠানোর ব্যবস্থা থাকছে। অ্যাপের মাধ্যমেই নিকটবর্তীফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যোগাযোগ করা যাবে। রোগী ঘরে বসেই ওষুধ পেয়ে যাবেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট আনতে যেতে হবে না, রিপোর্ট সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড হয়ে যাবে। রোগী ও ডাক্তার, দুজনই রিপোর্ট দেখতে পাবেন। ঢাকাকে কয়েকটা জোনে ভাগ করে এই সুবিধা দেয়া হবে। এ ছাড়া রোগীর সমস্যা, ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষাÑসবকিছুর তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এ্যাপে। ডাক্তার একনজর দেখলেই রোগীর ‘মেডিক্যাল হিস্ট্রি’ জেনে নিতে পারবেন। কিউর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এর স্বাস্থ্যসেবার বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে স্বপ্নবাজ তিন তরুণ। ডিজিটাল এই যুগে, স্বাস্থ্যসেবায় এখনও ডিজিটালাইজেশন এর তেমন ছোঁয়া পায়নি। এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় প্রজেক্ট কিউর জানান তিনি। বিজয়ী হওয়ার পর অনূভুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদমান সাকিব বলেন; ইতোপূর্বে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের প্রজেক্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি সফলতার সঙ্গে সেহেতু আত্মবিশ্বাস ছিল এবারও ভাল কিছু করব। তবে বিশ্বের প্রথম কাতার এর দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা সত্যি আমাদের জন্য খুব গর্বের। প্রায় ৬০টি ভিন্ন দেশ এর বাছাইকৃত ২০০০ প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিল, এবং চমৎকার একটি পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা। তাদের সকলকে যখন প্রমাণ করে এলাম বাংলাদেশও সেরাদের একজন, সেই মুহূর্তটা সত্যি স্মরণীয় বটে। আমরা চাই আমাদের প্রোজেক্ট কিউর যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে এবং বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনতে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবাটা পৌঁছে দেয়ার জন্য অবশ্যই বিনিয়োগের প্রয়োজন তা সম্পর্কে জানতে চাইলে রিদওয়ানুল আরেফিন অর্ণব বলেন; ২০১৭ সাল থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা শুরু করি। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল ঘরে ঘরে কিউর এর সেবা পৌঁছে দেব আমরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বিনিয়োগ। দেশের বাইরের কিছু বিনিয়োগকারী আমাদের প্রোজেক্ট এ আগ্রহ দেখাচ্ছে তবুও আমরা সরকারের সুদৃষ্টি চাচ্ছি এই ব্যাপারে। যদি সরকারের অবকাঠামোগত সাহায্য পাওয়া যায় তাহলে এই সেবা পৌঁছে দেয়া খুব সহজেই সম্ভব হবে। যেমন ধরুন আমরা কোন এক গ্রাম এ সেবা দিতে চাই কিন্তু ওইখানের কৃষক বা অন্য যে কোন লোকের স্মার্টফোন নেই সেক্ষেত্রে ওই গ্রামের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে যদি ‘কিউর’-এর সেবা পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে ওই কৃষক কিংবা গ্রামের যে কেউ সহজেই উপকৃত হবে। এ ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আইনগত সাহায্য প্রয়োজন। যেহেতু এটি অনেক বড় এবং সেবামূলক প্রোজেক্ট তাই সার্বিক সহযোগিতাই কাম্য। আমরা স্বপ্ন দেখি সকলের সাহায্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার বিপুল পরিবর্তন করব।
×