ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্রমর যেভাবে আঁধারেও চিনে নিতে পারে

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২০ মার্চ ২০২০

ভ্রমর যেভাবে আঁধারেও চিনে নিতে পারে

অন্ধকারে আমরা কিভাবে কোন জিনিস খুঁজে বের করতে পারি? ধরুন আপনার চাবি খোয়া গেছে। অন্ধকারে আপনি চারদিকে হাতরে বেরিয়ে সেই চাবিটি খুঁজে পেতে পারেন। যে বস্তুটি আপনি আগে দেখেছেন শুধু স্পর্শ দ্বারাই আপনি সহজেই বস্তুটিকে চিনতে পারেন। এর কারণ আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম যে নিজের দেখা বা পরিচিত কোন বস্তু হারিয়ে গেলে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় অনুভূতির দ্বারা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এই বহু-ইন্দ্রিয়ানুভূতির সংযোগের ফলে বস্তুজগত বা বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে একটি মানসিক ইমেজ আমরা গঠন করতে সক্ষম হই। দেখা গেছে যে ভিন্ন ভিন্ন ইন্দ্রিয়ানুভূতির দ্বারা বস্তুসমূহকে চেনার ক্ষমতা একটা ক্ষুদে পতঙ্গের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের মধ্যেও রয়েছে। তাই জানা গেছে যে ভ্রমররাও যে বস্তুকে আগে একবার মাত্র দেখেছে সেটিকে তারা অন্ধকারেও খুঁজে বের করতে পারে। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিডনির ম্যাককোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই অভিনব তথ্যটি উন্মোচন করেছেন। ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে এটা দেখানো হয়েছে। গবেষণায় আলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কোন বস্তুকে স্পর্শ করতে না দিয়ে ভ্রমরদের কিউর অথবা গোলকের মতো এক ধরনের বস্তুর মধ্যে রাখা মিষ্টি পানি অন্য আকৃতির কোন বস্তুর মধ্যে কুইনিনের দ্রবণ খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোনটাতে মিষ্টি পানি আর কোনটিতে তেঁতো পানি সেই অভিজ্ঞতা তাদের আগেই দেয়া হয়েছিল। এরপর অন্ধকারে তাদের ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। দেখা গেল ভ্রমররা সেই বস্তু বা বস্তুগুলোই খুঁজে বের করেছে এবং সেগুলো আগের অভিজ্ঞতায় তারা লাভজনক বা ফলদায়ক হিসেবে দেখেছে। ভ্রমররা আরেকভাবেও এই একই ধাঁধার সমাধান করেছে। অন্ধকারে একটি নির্দিষ্ট আকৃতির বস্তুকে খুঁজে বের করতে শেখার পর ভ্রমরদের এবার আলোর মধ্যে একই পরীক্ষা করা হয়। এবারও দেখা গেছে যে যে আকৃতির বস্তুর মধ্যে তাদের জন্য আকর্ষণীয় জিনিস আছে বলে তারা শুধু স্পর্শের মাধ্যমে জানতে শিখেছিল আলোর মধ্যে তারা সেই আকৃতির বস্তুটিকেই বেছে নিয়েছে। এই যে চিনতে পারার সক্ষতা এটাকে বলে ক্রস-মডেল রিকগনিশন এবং এই সক্ষমতার দ্বারা আমরা নানা বস্তুরাজিতে সমৃদ্ধ বিশ্বের একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণা করতে পারি। গবেষণাপত্রের প্রধান রচয়িতা ড. কোইন সলভি বলেন, আমাদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে ভ্রমররা পৃথক পৃথক চ্যানেল হিসেবে তাদের ইন্দ্রিয়ানুভূতিগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে না। এগুলো এক ধরনের একীভূতি চ্যানেল হিসেবে কাজ করে। পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির একটি ল্যাবে। সেই ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক লারস শিটকা বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই জানি যে মৌমাছি বা ভ্রমররা ফুলের আকার আকৃতি মনে রাখতে পারে। তবে একটা স্মার্টফোন আপনার চেহারা চিনতে পারে এবং তার জন্য সেটির কোন ধরনের সচেতনতার দরকার হয় না। আমাদের এই নতুন গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে ভ্রমরদের মনের মধ্যে কিছু একটা চলছে যা একটা মেশিন থেকে একেবারেই আলাদা। সেটা হলো ভ্রমররা আকার-আকৃতির ইমেজগুলো মনের মধ্যে ধারণ করে রাখতে পারে। গবেষণাপত্রের যুগ্ম প্রণেতা এবং বর্তমানে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র সেলেন গুটিয়েরেজ বলেন : ভ্রমরের মস্তিষ্কের অতি ক্ষুদ্র আকারের কথা ভাবলে এ ব্যাপারটা অতি বিস্ময়কর। ভ্রমরের এই সক্ষমতার পেছনে রয়েছে যে নিউরাল সার্কিট ব্যবস্থা ভবিষ্যতে তা নিয়ে গবেষণা করলে একদিন জানতে পারা যাবে কিভাবে আমাদের নিজস্ব মস্তিষ্ক এই জগতকে কল্পনা করে। তবে ড. সলভি সাবধান করে দিয়েছেন যে, তার মানে এই নয় আমরা জগতকে যেভাবে কল্পনা করি ভ্রমররাও সেই একইভাবে করে। অবশ্য এই গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে আমরা ওদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের জন্য যত কৃতিত্ব দিয়েছি তার চেয়ে ঢের বেশি ক্রিয়াকলাপ তাদের মস্তিষ্কের ভেতর চলে। সূত্র : সায়েন্স নিউজ
×