ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোশাকে লাল সবুজের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২০ মার্চ ২০২০

পোশাকে লাল সবুজের ছোঁয়া

বাঙালি মানেই সংগ্রাম, আন্দোলন আর স্বাধিকার জাগরণের অমোঘ স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক। যে উজ্জ্বলতার প্রতিটি বাঁকে উদ্ভাসিত হয়ে আছে অফুরন্ত বীরত্বগাঁথা। মুক্তিযুদ্ধের অমিয় অধ্যায়ের পথ রচনায় বাঙালীর অবিস্মরণীয় সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে যে সাংস্কৃতিক প্রান্তর অরুণোদয়েক আলোয় আলোকিত হয়েছে। সেই আলোরই ছন্দময় ঔজ্জ্বল্যে স্পন্দিত হয়ে ওঠে বাঙালীর ফ্যাশন ধারা। চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের পঙক্তিমালা সাজিয়ে দেশীয় মোটিফে লোকজ ফর্মে ক্রমান্বয়ে একটা ভিত রচিত হয় । যে ভিতের ওপর এখন ফুটেছে ফ্যাশন গোলাপ, জুঁই, চাঁমেলী, চন্দ্রমল্লিকা আর রাশি রাশি হাস্নুহেনা। সময়ের নিরিখে বাংলার ঐতিহ্য লালিত ফ্যাশন ধারার রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। যে ইতিহাসের ভেতর স্বপ্নগুচ্ছের মতো বর্ণিল এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দেশীয় ফেব্রিকের নিপুণ ছন্দোবদ্ধতায়। আর তারই প্রকাশ চোখের সম্মুখে মেলে ধরে ভিন্নমাত্রার নতুন আঙ্গিকে রূপায়িত আজ বাংলার ফ্যাশন। যা কিনা সম্পূর্ণ নিজস্বতা নিয়ে বাঙালীর মনকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয়। আজ তাই ফ্যাশনে বাঙালী সংস্কিৃত আর দেশাত্মবোধের স্ফূরণ হয়ে ওঠে লক্ষণীয়। সব বয়সী বাঙালীর জীবনধারাই যেন ক্রমশ বদলে দেয় সমকালীন ফ্যাশনগল্প। যে গল্পের ছোঁয়ায় দৈনন্দিন জীবনের নানা পরতে পরতে এক একটি স্পন্দন ভিন্ন ভিন্ন আমেজে অনুরণিত হয়। এই অনুরণনের ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। ষড়ঋতুর এই বাংলায় প্রকৃতির যেমন রয়েছে একটা হৃদয়ছোঁয়া রূপ তেমনি বাঙালীর জীবনধারায় আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে আরও একটি অন্যরকম ছবি। যে ছবিটা বাঙালীর কাব্যিক জীবনবোধে সংগ্রামী চেতনার বৈপ্লবিক ঐক্যবদ্ধতার স্বরূপটাকে উন্মোচিত করে দেয়। সেই ১৯৫২ সাল থেকে এ বৈপ্লবিক ধারার গতিটা প্রবল বেগে সঞ্চারিত হতে থাকে। তারপর আসে ১৯৭১। ’৭১ এর মার্চে দু’টি দিন বাঙালীর জীবনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে। এর একটি ২৫ মার্চ। যেদিন পাকিস্তানী শাসকচক্রের ষড়যন্ত্রের জাল ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর ছড়িয়ে দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী রাতের ঘোর অন্ধকারে চালায় নিষ্ঠুরতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এ দিবসটিকে বাঙালী জাতি অত্যন্ত ব্যথিত মনে স্মরণ করে প্রতি বছরের ২৫ মার্চ। ইতিহাসের এই বর্বরতম নির্মমতার ছবিটার পাশের ফ্রেমেই অতিযতেœ প্রতিটটা বাঙালী আরও একটি দিবসকে বাঁধাই করে রেখে আনন্দমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করে গভীর উদ্দীপনার। এদিনটি হলো বাঙালীর স্বাধীনতা দিবস। ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা দিবসকে বাঙালী জাতি দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে পরম আনন্দে উৎসবী আমেজে নিজের মতো করে উদ্যাপন করে আসছে। শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, গল্প, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নাটক, চলচ্চিত্র এবং ফ্যাশনসহ নানা অনুষঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের লাল সবুজের রঙে গাঁথা বাংলার ছন্দময়, সুরেলা আবেশ যেন বুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালী সংস্কৃতির সব শাখাতেই রয়েছে স্বাধীনতা দিবসের আকণ্ঠ প্রভাব। যে প্রভাবের স্পর্শ ফ্যাশনধারাকেও করেছে উজ্জীবিত। নগর জীবনের দিকে দৃষ্টি রাখলেই এর প্রতিবিম্বটা চোখে পড়বে। সব বয়সের বাঙালী নারী-পুরুষের মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের ছাপটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্টসহ সব ধরনের পোশাকেই স্বাধীনতা দিবসে বাংলার প্রতিকৃতি লাল সবুজের পতাকা অঙ্কিত হয়ে যেন প্রতিটি ড্রেসই হয়ে ওঠে এক একটি পতাকা। ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় দিনটিকে মহিমান্বিত করে তোলার লক্ষ্যে ফ্যাশন ডিজাইনাররাও কবিতার পঙক্তিমালা থেকে শুরু করে নানা বিষয় তুলির আঁচড়ে উৎকীর্ণ করেন। পোশাকের বুকে উদ্ভাসিত হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অবিনশ্বর পঙক্তিগাঁথা মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতন্ঋাদ্ধ নানা চিত্র সব মিলিয়ে বাঙালীর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্তকে ফ্যাশন ধারায় এক অন্যমাত্রায় চিত্রিত হতে দেখা যায়; যা বাঙালীর চির স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যেরই প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যে নির্মমতা দেখিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী সেই নির্মমতার গহনে যেমন লিপিবদ্ধ হয়েছে অজস্র এলিজি। রচিত হয়েছে মন খারাপ করা এপিটাফ। পাশাপাশি নয়মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পর একইভাবে রচিত হয়েছে অসংখ্য-অজস্র বিজয়গাথাও। আর এই বিজয়গাথার মুকুটে আরও একটি স্বর্ণোজ্জ্বল পালক গুজে দিয়েছে বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির মন্ত্রে সিক্ত ফ্যাশন ধারা। এবারের স্বাধীনতা দিবসের উৎসবটা ভিন্ন এক মাত্রায় উপস্থিত হয়েছে ফ্যাশনপ্রিয় বাঙালীর জীবনে। এরই মধ্যে স্বাধীনতা দিবসের ড্রেস কালেকশনের লক্ষ্যে তরুণ-তরুণীসহ সবার মধ্যেই বিপুল আগ্রহের ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বুটিক শপগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধুম। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে টি-শার্ট এবং ফতুয়ার চাহিদা বেশি হলেও পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়ি, উত্তরীয়, রুমালের চাহিদাও কম নয়। তবে প্রতিটা ড্রেসেই থাকছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনে লাল সবুজের ছোঁয়া। প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলো স্বাধীনতা দিবসের ড্রেসে আউটলেটগুলো ইতোমধ্যে সাজিয়ে তুলেছে। ড্রেসের সঙ্গে থাকছে নানা রকম শো-পিসও। বাঙালী জাতির জীবনে ২৬ মার্চ একটি অমোঘ দিন। যে দিনটিকে ঘিরে সমগ্র বাঙালী জাতি হয়ে ওঠে আবেগাপ্লুত। আবেগের এই স্পন্দিত আবহটা এবারের ২৬ মার্চেও থাকবে বর্ণোজ্জ্বল গুঞ্জনে মুখর। ঢাকার নগরজীবন ছাপিয়ে মফস্বল শহরেও ফ্যাশনের তরঙ্গবীথি গড়িয়ে যাবে স্বকীয়তা নিয়ে। তুমুল আনন্দে উদযাপিত হবে সারাদেশে স্বাধীনতা তেতাল্লিশতম বর্ষ। যে উদ্যাপনের উজ্জ্বল প্রকাশ থাকবে ফ্যাশানের বর্ণময় প্রতিটা উপস্থাপনায়। আর এ উপস্থাপনার মুকুটে যুক্ত হবে প্রজন্মচত্বরের তারুণ্যের গণজাগরণ মঞ্চের মুক্তিযুদ্ধের গভীর চেতনালব্ধ উপলব্ধি এবং বৈপ্লবিক দৃঢ়চেতা স্ফুরণের উদ্দীপ্ত পালক; যে স্ফুরণ আজ ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বাংলাদেশে। এমনকি বিশ্বের যেখানে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী বাঙালীরা রয়েছেন সেসব দেশেও। এবারের স্বাধীনতা দিবসে শাহবাগ বসন্তের তরঙ্গ ছাপিয়ে গিয়ে শিল্প, সংস্কৃতি, ফ্যাশনসহ শিল্পের সকল শাখাতেই মুক্তিযুদ্ধের আকণ্ঠ দীপ্রতার ছাপ রেখে যাবে অপূর্ব মহিমায়। যে ছাপে আগামীর ইতিহাসে এক অনন্য বীরত্বগাথার অধ্যায় অঙ্কিত হয়ে থাকবে। ছবি : চন্দন মডেল : আরিফ, রক্সি, ঈশা, শারমিন ও ইরানি পোশাক : ক্যাটওয়াক, মেকআপ : ফয়সাল, কোরিওগ্রাফি : জাহাঙ্গীর আলম
×