ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩

অনলাইন ডেস্ক ॥ দিল্লিতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের প্রাক্কালে এই দাঙ্গা শুরু হয়। বুধবার যেখানে নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭, বৃহস্পতিবার বিকালে তা ৩৮-এ পৌঁছায়। আর শুক্রবার রাত নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩। এরমধ্যে ২১ জনই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে প্রাণহানির এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কেননা, আহতদের মধ্যে অনেকেই এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। দাঙ্গার ঘটনায় মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি-র বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছে ভারতের মোদি সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওআইসি’র বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যদিও দিল্লিতে এ দাঙ্গার ছাপ এখনও স্পষ্ট। ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিয়েছে মুসল্লিরা। মঙ্গলবার রাতের পর নতুন করে খুব বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে দাঙ্গার ঘটনায় ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় মুসলিমবিরোধী এ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ইতোমধ্যেই হতাহত ২৫০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। আক্রান্ত প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের শরীর বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। উল্লেখ্য, ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিক্ষোভের ঘটনায় বরাবরই ক্ষুব্ধ দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও মুসলিমবিদ্বেষী তোপ দাগেন দলটির নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বহু নেতা ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার সহিংসতায় উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে শুরু হয় নজিরবিহীন তাণ্ডব। উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে সময় চেয়েছে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, যথাসময়ে এফআইআর দায়ের করা হবে। এজন্য আদালতে বাড়তি সময়ের আবেদন জানান সলিসিটর জেনারেল। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকারকে ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে উগ্রবাদী হিন্দু জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান পরিলক্ষিত হয়। এমনকি ২০১৯ সালের নির্বাচনি প্রচারণাতেও ফের নির্বাচিত হলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন মোদি। আর ইতোমধ্যেই অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। দিল্লির মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঘটনায় ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসি। ওই দাঙ্গার জেরে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অনেক বছর ধরে নিষিদ্ধ ছিল। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
×