ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চসিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ

ইভিএমের বিষয় দেখতে কেন্দ্রে থাকবে সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   ইভিএমের বিষয় দেখতে কেন্দ্রে থাকবে সেনাবাহিনী

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন এবং চট্টগ্রামের একটি উপ-নির্বাচনে ভোট পড়ার হার এতই কম ছিল যে, তা বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ তিনটি নির্বাচন হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। কম ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়াকে গণতন্ত্রের জন্য অশুভ হিসাবে দেখছেন অনেকেই। চসিক নির্বাচনও হতে যাচ্ছে একই পদ্ধতিতে। এদিকে, নির্বাচনে সব ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টার কথা জানিয়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট হবে বলে আশ^স্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম। শুক্রবার চট্টগ্রামে তিনি এক দিক নির্দেশনামূলক সভাশেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ইসি রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলেই ভোট দিতে পারবেন। আমরা একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য সব ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কোন ঝামেলা হবে না, এটুকু আশ^স্ত আমরা করতে পারি। ভোট কেন্দ্রে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সেনাবাহিনী দেখবে বলে জানান এই কমিশনার। তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কখনও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। এবারও হবে না। তবে কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকবে এবং সেটা পোশাকে। তবে তাদের অস্ত্র থাকবে না। তারা ইভিএমের বিষয়গুলো দেখবেন। স্বাধীনতা দিবসসহ টানা ছুটির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচন পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে ইসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তা সম্ভব নয়। সে সুযোগ নেই। কারণ, ১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা, যা চলবে পুরোমাস। এরপর রোজা এবং ঈদ-উল ফিতর। তারপর আসছে বর্ষাকাল। বর্ষাকালে চট্টগ্রাম শহরে নির্বাচন কল্পনা করা যায় না। শুক্রবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই সংক্রান্ত দিক নির্দেশনামূলক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনির হোসেন খান, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান, বশির আহমেদ, রাঙ্গামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সফিকুর রহমান, কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমদ ও কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন। এদিকে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন এবং চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ায় চিন্তিত সরকারও। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ৩০ শতাংশের মত ভোট পড়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ২৩ শতাংশের কম। এত কম ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি ভোটের হার বাড়াতে তৎপর হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার নয়, তা মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। কেননা, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পাশাপাশি এক্ষেত্রে ভোটে অংশগ্রহণকারি দলগুলোর দায়িত্বশীলতার ব্যাপারও রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ঢাকা সিটি নির্বাচনের পর জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে কমিশন সফল হয়েছে। কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব কমিশনের নয়। ইসির স্বস্তি এখানেই যে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত তিনটি ভোট নিয়ে সমালোচনা থাকলেও একটি বিষয় এর মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে , ইভিএমে যার ভোট তাকেই দিতে হয়। কোন দল দিনভর ভোট কেন্দ্রে প্রভাব রাখলেও ভোটার উপস্থিতি ছাড়া ভোটের হার বাড়ানো সম্ভব নয়। চসিক নিবাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, “একটা অপবাদ থেকে অন্তত আমরা রক্ষা পেয়েছি ইভিএমের কারণে। কম ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সমালোচনা থাকলেও কেউ অন্তত বলতে পারছে না যে, কেন্দ্রে ভোটার দেখলাম না, অথচ ৯০ শতাংশ ভোট পড়ে গেছে।” চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি দল বিএনপি সমালোচনায় সোচ্চার হলেও ইভিএমের ওপর ভরসা রেখে হিসাব কষছে বলে জানা যায় দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে। নির্বাচনকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে ইভিএমের সাম্প্রতিক তিনটি নির্বাচনের পর তারা নিজ দলের ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের বক্তব্যও ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থীর মত অতটা জ্বালাময়ী নয়। তিনি নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ কিংবা সরকার পতনের হুংকারের সঙ্গে না জড়িয়ে নির্বাচিত হলে কেমন নগরী গড়তে চান, সে বক্তব্যই তুলে ধরছেন।
×